কোমরে দড়ি পরিয়ে ‘হাঁট’, বলল পুলিশ

কোমরে দ়ড়ি বাঁধা লোকটাকে যে অনেকেই চেনেন। তিনি কংগ্রেসের করিমপুর ২ ব্লক সভাপতি খেজমত মণ্ডল। পুলিশের ওসি-র সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাই দুপুর রোদে ঘণ্টাখানেক তাঁকে বাজকাপাড়া, ঘোষপাড়া, থানারপাড়া, পুরাতনপাড়ায় ঘুরিয়ে থানায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

সুস্মিত হালদার ও কল্লোল প্রামাণিক

কৃষ্ণনগর ও করিমপুর শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:২২
Share:

‘অপমানিত’ কংগ্রেস নেতা।

মানুষটা হেঁটে চলেছেন মাথা নামিয়ে। কোমরে দড়ি বাঁধা। তা ধরে পিছনে দুই খাকি উর্দি।

Advertisement

দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছেন গাঁয়ের মানুষ। কোমরে দ়ড়ি বাঁধা লোকটাকে যে অনেকেই চেনেন। তিনি কংগ্রেসের করিমপুর ২ ব্লক সভাপতি খেজমত মণ্ডল। পুলিশের ওসি-র সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাই দুপুর রোদে ঘণ্টাখানেক তাঁকে বাজকাপাড়া, ঘোষপাড়া, থানারপাড়া, পুরাতনপাড়ায় ঘুরিয়ে থানায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ।

ইতিমধ্যে নদিয়ার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন নদিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা আইনজীবী অসীম সাহা। কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘পুলিশের এই কাজ সংবিধান বিরোধী, মানবাধিকার বিরোধী।’’

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খেজমত মণ্ডলের বাড়ির দোতলায় ভাড়া থাকতেন থানারপাড়া থানার ওসি অনিমেষ দে। মাস আটেক আগে খেজমতের ভাই, সিমেন্ট ব্যবসায়ী সাদিফুলের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা হয়। এক লরি ভিজে সিমেন্ট নেওয়ার জন্য সাদিকুলকে তিনি চাপ দিচ্ছিলেন এবং সাদিকুল রাজি না-হওয়ায় মারধর করেন বলে অভিযোগ। তাতে খেপে উঠে এলাকার কিছু লোকজন ওসি-র ঘরে ভাঙচুর চালায়, মোটরবাইক পুড়িয়ে দেয়। খেজমতদের তিন ভাই ও স্থানীয় বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। খেজমত বাদে দুই ভাই আদালত থেকে জামিন পান।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি খেজমত তেহট্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। ১৯ তারিখ পুলিশ তাঁকে চার দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয়। এর পর ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে কোমরে দড়ি বেঁধে কয়েকটি গ্রামে ঘোরানো হয় বলে অভিযোগ। অসীমবাবুর মতে, “কোমরে দড়ি বেঁধে পুলিশ কার্যত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসেছে। কেননা আদালতের আগাম নির্দেশ ছাড়া কাউকে এমনকী হাতকড়াও পরানো যায় না।”

যদিও পুলিশ বেশির ভাগ সময়েই তা মানে না। মুর্শিদাবাদের এক সরকারি আইনজীবী অশোক সাহা বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ঝুঁকি না নেওয়ার জন্য দড়ি পরায়। কিন্তু যারা দাগি অপরাধী নয় বা পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম, তাদের ক্ষেত্রে এ সবের প্রশ্নই আসে না।”

খেজমতের পরিবারের আক্ষেপ, এ ঘটনায় তাদের সম্মান ধুলোয় লুটিয়েছে। সাদিফুল বলেন, “আমার দাদা খুনি না ডাকাত, যে এ ভাবে গ্রামে ঘোরাবে?’’ অশোকবাবু বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ চেয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঁরা মামলা করতে পারেন। মনে হয়, বিরোধী দলের নেতা বলেই পুলিশ এই সাহস পেয়েছে।’’পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, খেজমতের বাড়ির গুদাম থেকে একটি দেশি মাসকেট, এক রাউন্ড গুলি ও বোমা তৈরির উপকরণ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তা সত্যি হলেও কি কাউকে কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরানো যায়? ওসি বলেন, ‘‘এই ব্যাপারে যা বলার, বড়সাহেব (জেলা পুলিশ সুপার) বলবেন।’’ পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “এমন অভিযোগ জমা পড়েছে কি না আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নেব।”

প্রশ্ন হল, অভিযুক্ত বিরোধী নেতা বলেই এই দুঃসাহস দেখাল পুলিশ? করিমপুরের তৃণমূল বিধায়ক মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘‘এমনটা যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তা খুবই দুঃখজনক। তবে এতে শাসক দল হিসেবে আমাদের কোনও দায় নেই। আমরা পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করি না।’’

সহ প্রতিবেদন: বিমান হাজরা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন