আচমকা বাস থামতেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যাত্রীরা। দিন দুয়েক আগেই সেখানে বাস দুর্ঘটনায় ঝরেছে ন’টি তাজা প্রাণ। পুলিশ দেখে ভয় বেড়েছিল যাত্রীদের। যাত্রীদের থেকেও বেশি ঘাবড়ে যান বাসের চালক।
তিনি সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে নামতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় পুলিশ তাঁকে নামতে বারণ করে। চালকের কেবিনে বসা কয়েক জন যাত্রীকে তাঁরা নীচে ডেকে নেন। দুরুদুরু বুকে নীচে নামতেই পুলিশ কর্মীরাই তাঁদের ভয় ভাঙিয়ে দেন। এক পুলিশ আধিকারিক তাঁদের বলেন, ‘‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ক’দিন আগের বাস দুর্ঘটনার কথা তো সবাই জানেনই। তাই আমরা আপনাদের কাছে কিছু জানতে চাইব। ঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন।’’ তার পরেই শুরু হয়ে যায় একের পর এক প্রশ্ন। চালক কি তীব্র গতিতে চালাচ্ছিলেন? অন্য কোনও বাসের সঙ্গে রেষারেষি করছিল কিনা?
তেহট্টের সরিকুল সেখ বললেন, ‘‘পুলিশ যে এত সব জানতে চাইবে তা ধারণার বাইরে ছিল। বাস চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলছিলেন কি না, বিড়ি সিগারেট খাচ্ছিলেন কি না— এমন নানা প্রশ্ন। তবে বুঝেছি এটা করলে মঙ্গলই হবে। চালকেরা আর বেপরোয়া হওয়ার সাহস পাবে না।’’
পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদেও পথে নামল পুলিশ। শুক্রবার বহরমপুর ও সংলগ্ন এলাকায় ছাদ থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয় পুলিশ।
আরও পড়ুন: কমিশন কই, ক্ষুব্ধ বিরোধীরা
বৃহস্পতিবার দুপুরে তেহট্টের এসডিপিওর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তেহট্টের নাজিরপুরে করিমপুর কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়কে এই অভিযান চালায়। বেলা ১২টা থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে ত্রিশটি বাসের যাত্রীদের কাছে পুলিশ নানা তথ্য জানতে চান। পুলিশ কর্মীরা যাত্রীদের বলেন, চালকের সামান্য ভুলে অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। তাই পুলিশের সঙ্গে যাত্রীরা সহযোগিতা না করলে বাস চালকদের নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়।
নদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তন্ময় সরকার বলেন, “এই অভিযান চলবে। যাত্রীদের থেকে অভিযোগ পেলে চালকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”
মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন রুটের বাসে ছাদে যাত্রী তোলা কন্ডাকটরদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। কম ভাড়া লাগবে বলে অনেক সময় যাত্রীরাও ছাদে চড়ে বসেন। এ ভাবে বেশ কিছু ছাদের যাত্রীর প্রাণও গিয়েছে। শুক্রবার বহরমপুর থানার পুলিশ আচমকাই অভিযানে নামে। বাস এবং ট্রেকারের ছাদ থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। বাসের চালক-কন্ডাকটরদের সাবধান করা হয়, ফের এমন ঘটলে বাসের বিরুদ্ধে কেস দেওয়া হবে।
যাত্রীরা বলছেন, ‘‘এমন দুর্ঘটনা না ঘটলে পুলিশের কি হুঁশ ফিরত? এই অভিযান যেন বন্ধ না হয়।’’