অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
সাতসকালে বেজে উঠল ল্যান্ডফোন। বেশ কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পরে ক্রেডল থেকে রিসিভার তুললেন কনস্টেবল—‘নমস্কার, হোগলবেড়িয়া থানা।’
ও প্রান্ত থেকে ওসির জোর ধমক, ‘‘ঘুমোচ্ছিলেন নাকি? ফোন তুলতে এত দেরি হচ্ছে!’’
কনস্টেবল থতমত, ‘‘না, মানে ইয়ে স্যার...।’’
—‘বলছি, অতিথি দু’টোকে কি খাওয়ানো হয়েছে? নাকি, সে কাজটাও আমাকে গিয়ে করতে হবে?’
—‘না স্যার, সক্কালে উঠেই আমি আর ওই সিভিক ছেলেটা গিয়ে খাইয়ে এসেছি। এখন ওরা স্যার জিরোচ্ছে।’
—‘আপনি কি ওদেরও স্যার-স্যার করছেন নাকি?’
—‘কী যে বলেন স্যার!’
ফোন রেখে খুকখুক করে হাসছেন কনস্টেবল।
‘উফ, এমনটাও কপালে ছিল!’ গজগজ করতে করতে সকালের চায়ে চুমুক দেন ওসি কমটন রায়। তিনি বলছেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত ওই অতিথিদের দেখভাল আমাদেরই করতে হবে।’’ যাদের নিয়ে এত হইহই, সে দু’টি অবশ্য দিব্যি খাচ্ছে, জিরোচ্ছে, ইয়ে করছে। বিকেলে ঘুরতেও বেরোচ্ছে। আর সে সবটাই সামলাতে হচ্ছে পুলিশকর্মীদের!
বিরক্ত এক পুলিশকর্মী বলছেন, ‘‘ওই তো কালো চেহারা। বিকেলে মাঠের দিকে নিয়ে গেলে ওরা আবার দাঁত বের করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। আচ্ছা, মোষেরা কি হাসে?’’
অতিথি দু’টো আসলে নধর কালো মোষ। দিন কয়েক আগে সীমান্তের গোপালপুরঘাট এলাকায় টহল দিতে বেরিয়েছিল পুলিশের গাড়ি। আচমকা ঘ্যাঁচ। কী ব্যাপার? সুনসান রাস্তায় মোষ দু’টো ভ্যাবাচাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশ তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়। কিন্তু তাদের মালিকের দেখা মেলে না।
অভিজ্ঞ পুলিশকর্মীদের বুঝতে দেরি হয়নি। এ মোষ দু’টিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সীমান্তের দিকেই। উদ্দেশ্য একটাই— পাচার। পুলিশের গাড়ি দেখে বিপদ বুঝে সরে পড়েছে পাচারকারীরা। মোষ দু’টোকে আটক করে নিয়ে আসা হয় থানায়। জিডি করে বিষয়টি আদালতেও জানানো হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আদালত থেকে কোনও নির্দেশ না আসায় থানা চত্বরে জামাই আদরে রয়েছে মোষ দু’টো। আর তাদের দেখভাল করতে গিয়ে ঘুম ছুটেছে পুলিশের।
থানার একটি ছায়াঘেরা জায়গায় রাখা হয়েছে দুই অতিথিকে। সকালে কচি ঘাস, খড়। সঙ্গে দু’ বালতি জল। ফের দুপুরে একবার খাওয়া। তারপর বিকেলে তাদের নিয়ে সটান পাশের মাঠে। আগে আগে মোষ দু’টো হেলতে দুলতে হাঁটে। পিছু পিছু একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। হাতে গাছের একটা ভাঙা ডাল। পথের দু’পাশ থেকে ছিটকে আসে টিপ্পনি—‘বাহ্, বেশ মানিয়েছে তো!’’
গোমড়া মুখে এক পুলিশকর্মী বলছেন, ‘‘চাকরি বাঁচাতে যে আরও কী কী করতে হবে, কে জানে!’’
মোষ দু’টো কি আবার দাঁত বের করল?