লোকশিল্পীদের সম্মেলনে বিজেপির কৈলাস বিজয়বর্গীয়। মঙ্গলবার নবদ্বীপের তেঘরিপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
পাঁচ দিন আগে ছিল মা-মাটি-মানুষের সংগঠন। আর মঙ্গলবার ‘অল ইন্ডিয়া’ সংগঠন। লোকসভা ভোটের আগে বাইল-কীর্তন শিল্পীদের নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির ‘আমরা ওরা’ তুঙ্গে উঠল।
এ দিন নবদ্বীপের তেঘরিপাড়ায় একটি অনুষ্ঠান হলের মাঠে মঞ্চ গড়ে সভার আয়োজন করা হয়। এর আগে কলকাতার সম্মেলনেও যেমন তিনি মঞ্চের কেন্দ্রে ছিলেন, এ দিনও তেমন ভূমিকাতেই দেখা গেল বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে। তিনি অকাতরে বাদ্যযন্ত্র আর আশ্বাস বিলি করলেন, ভজনও গাইলেন।
তৃণমূল অনুগামী নতুন যে সংগঠন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন করেছিল, তাদের তুলনায় এ দিনের আয়োজন দৃশ্যতই ছিল তার চেয়ে অনেক বড় আর জমজমাট। গত বৃহস্পতিবার প্রবল দুর্যোগের মধ্যেই নবদ্বীপের একটি মন্দিরে সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ‘সারা বাংলা মা-মাটি-মানুষ কীর্তন বাউল ও লোকশিল্পী সমন্বয় সমিতি’। নদিয়ায় নানা প্রান্তের বাউল ও কীর্তনিয়ারা এসেছিলেন। নবদ্বীপের পুরপ্রধান, তৃণমূলের বিমানকৃষ্ণ সাহা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বলা হয়, দুঃস্থ শিল্পীদের সরকারি সহায়তার আওতায় আনাই এর উদ্দেশ্য।
নতুন ওই সংগঠনের তুলনায় এ দিনের আয়োজকেরা অনেক পুরনো। ২০০৪ সালে ‘অল ইন্ডিয়া কীর্তন বাউল অ্যান্ড ডিভোশনাল সিঙ্গারস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ এরফে ‘শিল্পী সংসদ’ নামে এই সংগঠনটির জন্ম। সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি সিদ্ধার্থশেখর দাসের দাবি, গত দেড় দশকে শুধু এই রাজ্যেই তাঁদের সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আঠাশ লক্ষে। ফলে তাঁদের সম্মেলনও বেশি জমজমাট হবে, সেটাই প্রত্যাশিত। তাঁরা বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের অনুগামী নন বলেও তিনি দাবি করেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সিংহ, বিজেপির নদিয়া উত্তর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি মহাদেব সরকার, নবদ্বীপের নেতা জীবন সেনরা হাজির ছিলেন। সঙ্গীতপ্রেমের সঙ্গে উদ্যাপন ছিল দেশপ্রেমেরও।
এ দিন অনুষ্ঠান শুরুই হয় নবদ্বীপে গঙ্গার ঘাটে পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের স্মৃতিতর্পণ করে। পরে মঞ্চে কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানান, গত কেন্দ্রীয় বাজেটে ষাটোর্ধ্ব দুঃস্থ শিল্পীদের জন্য মাসে তিন হাজার টাকা করে পেনশন বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রকৃত শিল্পীরা যাতে সেই পেনশন পান, সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে কীর্তন ও বাউল-সহ নানা ধারার লোকশিল্পীদের মাসিক এক হাজার টাকা করে ভাতা, নিয়মিত সরকারি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ, গুণী শিল্পীদের সম্মাননা ও পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। তা হলে তাঁরা নতুন আর কী করছেন? সিদ্ধার্থশেখরের দাবি, ‘‘বাম জমানায় আমাদের কথা কেউ শোনেনি। তাই পরিবর্তন চেয়েছিলাম। আমাদের নিয়মিত আন্দোলন, অনশনের পরে যখন রাজ্য সরকার মাসিক ভাতা চালু করল, আমাদের বিনীত দাবি ছিল, ষাটোর্ধ্ব শিল্পীদের যেন পেনশন দেওয়া হয় আর শিল্পী নির্বাচনের সময়ে যেন আমাদের মত শোনা হয়। ওঁরা তা করলেন না।’’
শিল্পী সংসদের অভিযোগ, যাঁরা কীর্তনিয়া-বাউল শিল্পীর ভাতা পাচ্ছেন তাঁদের একটা বড় অংশ আদৌ শিল্পী নন। প্রকৃত যাঁদের পাওয়ার কথা তাঁরা ধারে-কাছে নেই। নেতার আশ্বাসে তাঁরা খুশি জানিয়েও সিদ্ধার্থশেখর বলেন, ‘‘যদি দেখি এ সব কথার কথা, আমরা নিজেদের মতো করে চলব।” কৈলাস বিজয়বর্গীয় মঞ্চ থেকেই এক হাজার দুঃস্থ লোকশিল্পীকে খোল, ঢাক, ধামসা, মাদল, দোতারা, একতারা, করতাল দান করেন।
তবে তৃণমূল অনুগামী লোকশিল্পী সমন্বয় সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জয় দাসের কটাক্ষ, “এটা এক ধরনের রাজনৈতিক চমক। ভোটের আগে এক রকমের প্রচার। ওই ভাতার কথা আমরা গত দু’বছর ধরে শুনছি। আর বাদ্যযন্ত্র দান তো রাজ্য সরকার অনেক আগেই শুরু করেছে। দেখাদেখি ওরাও এখন সেই রাস্তায় হাঁটছে।”