দাম তলানিতে, মাঠেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে পেঁয়াজ

এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। ভাল ফলন পেয়েও পেঁয়াজের অভাবি বিক্রিতে সুতির সরলা, কিশোরপুর, বসন্তপুর ও লোকাইপুরের সহস্রাধিক চাষির মাথায় হাত পড়েছে।

Advertisement

বিমান হাজরা

সুতি শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২০
Share:

অবিক্রি: দাম নেই। তাই রাস্তার পাশেই বস্তাবন্দি পেঁয়াজ।

এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। ভাল ফলন পেয়েও পেঁয়াজের অভাবি বিক্রিতে সুতির সরলা, কিশোরপুর, বসন্তপুর ও লোকাইপুরের সহস্রাধিক চাষির মাথায় হাত পড়েছে। তার উপর শনিবারের শিলাবৃষ্টি তাঁদের আরও বিপদের মধ্যে ফেলে দিল। ক্রেতার অভাবে পথের ধারে ও বাগানে খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার বস্তা পেঁয়াজ ফেলে রেখেছিলেন চাষিরা। শিলাবৃষ্টির কারণে সেই পেঁয়াজেরও দফারফা।

Advertisement

২০১৪ ও ২০১৫ সালেও কুইন্টাল প্রতি ১৩০০ টাকা দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলেন চাষি। গত বছর পেঁয়াজ মাঠেই পচে গিয়েছিস। এ মাসের প্রথম দিকে ৪৩০ থেকে ৪৭০ টাকা কুইন্টাল দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলেন কিছু চাষি। কিন্তু এখন ৪০০ টাকা কুইন্টাল দরেও পেঁয়াজ কিনতে রাজি হচ্ছেন না কেউ। দিনকয়েক আগে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন মহাদেব মণ্ডল নামে এক পেঁয়াজ চাষি। মহাদেব বলছেন, ‘‘গত বছর ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ৪০ হাজার টাকা এখনও শোধ হয়নি। কারণ, গত বার সব পেঁয়াজ পচে গিয়েছিল মাঠেই। এ বার স্ত্রীর সোনার গয়না বন্ধক রেখে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছি। তা এখনও উদ্ধার করতে পারিনি।’’ প্রদীপ মণ্ডলের ৭ বিঘে জমিতে গড়ে ২০ কুইন্টাল করে পেঁয়াজ হয়েছে। তিনিও স্ত্রীর গয়না ব্যাঙ্কে রেখে ২৬ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। পেঁয়াজ এখনও পড়ে আছে পাশের বাগানে। ৪০০ টাকাতেও সে পেঁয়াজ কেনার লোক নেই। প্রদীপ বলছেন, “কথা দিয়েছিলাম পয়লা বৈশাখের আগে গয়না ছাড়িয়ে এনে দেব। কিন্তু এখনও তো পেঁয়াজই বিক্রি করতে পারলাম না।’’

কৃষি দফতরের হিসেবে প্রায় ৮০০ একর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে সুতি ২ ব্লকের এই চার গ্রামে। একরে গড়ে প্রায় ৫০ কুইন্টাল করে ফলন হয়েছে। ফার্মার্স ক্লাবের সম্পাদক দাতারাম মণ্ডল বলেন, “ধান, পাট, আলুর অভাবি বিক্রি বন্ধ করতে রাজ্য সরকার থেকে সে সব কিনে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পেঁয়াজের এমন অবস্থার পরেও সে সব কোনও উদ্যোগ নেই। বারবার বিষয়টি জানানো সত্ত্বেও কৃষি দফতর বা প্রশাসনের কেউই এলাকায় একবারের জন্য খোঁজও নিতে আসেনি।”

Advertisement

জঙ্গিপুরের সহকারি কৃষি আধিকারিক উত্তম কোনাই বলছেন, “চাষিদের এই দুরবস্থার কথা তো ব্লকের কৃষি আধিকারিক কিছুই জানাননি।’’ সুতি ২ বিডিও সন্দীপ ভট্টাচার্য বলছেন, “ওই এলাকার চাষিদের কাজ থেকে খুব শিগ্‌গির পেঁয়াজ কেনার কাজ শুরু করবে প্রশাসন। তবে কী দরে তা কেনা হবে সেটা নির্দেশ না পেলে বলা যাচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন