জগদ্ধাত্রীর মণ্ডপেই মৃত্যু পুরোহিতের

ঢাকের তালে চলছে আরতি। মণ্ডপে জড়ো হয়েছেন ভক্তেরা। তবে খুশির সেই আবহ হঠাৎই বদলে গেল। আরতি করতে করতে আচমকাই পড়ে গেলেন পুরোহিত মশাই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১৮
Share:

স্বজনদের কান্না। ইনসেটে, পরেশ ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র

ঢাকের তালে চলছে আরতি। মণ্ডপে জড়ো হয়েছেন ভক্তেরা। তবে খুশির সেই আবহ হঠাৎই বদলে গেল। আরতি করতে করতে আচমকাই পড়ে গেলেন পুরোহিত মশাই। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে জানা গেল, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তিনি। শনিবার ঘটনাঠি ঘটেছে কৃষ্ণনগর শহরের কালীনগরে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত পুরোহিত পরেশ ভট্টাচার্য স্থানীয় ক্লাব আমরা ক’জনের পুজোয় প্রায় ১৭ বছর ধরে পুজো করছেন। অন্য বারের মতো এ বারও সাত সকালেই মণ্ডপে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে এক সহকারী। এক দিনেই সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীর পুজো। মণ্ডপে সকাল ৬ টার আগেই তৈরি ছিলেন পুজো উদ্যোক্তারাও। এসেই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে খানিকটা ঠাট্টা-ইয়ার্কিও করেন পুরোহিত। তখনও কেউই বোঝেননি, এর পরে কী অপেক্ষা করে আছে! সাড়ে ১০ টা নাগাদ মোটামুটি শেষ হয়ে যায় নবমীর পুজো। এর পরে আরতি শুরু করেন পুরোহিত। সেই সময়ে ঢাকিদের নির্দেশ দেন, ভাল মতো বাজাতে। ঢাকের তালেই শুরু হয় আরতি।

মণ্ডপে তখন জনা কুড়ি স্থানীয় বাসিন্দা। আর তাদের সঙ্গে উদ্যোক্তারা। তাল কাটল তখনই। আরতি করতেই করতেই পড়ে যান পরেশ়। ছিটকে যায় হাতের ধুনুচি। ছুটে যান সকলে। তাঁর গায়ে মাথায় জল ঢেলে প্রাথমিক ভাবে সুস্থ করার চেষ্টা করেন সবাই। কিন্তু জ্ঞান ফেরেনি তার। একটি টোটোয় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

কালীনগর এলাকারই বাসিন্দা বছর ছাপ্পান্নের পরেশের সৎকারের যাবতীয় দায়ভার নিজেদের কাঁধেই নিয়েছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পুজো উপলক্ষ্যে আয়োজিত যাবতীয় অনুষ্ঠান। আমরা ক’জনের সদস্য দীনবন্ধু সাহা বলেন, “উনি দীর্ঘ দিন আমাদের পুজো করে আসছেন। আমাদেরই এক জন হয়ে উঠেছিলেন। এ ভাবে মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর সৎকারের ব্যয়ভার আমরাই নিচ্ছি।”

পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছর দীর্ঘ পুজোর মাঝে নিজে কিছুটা বিরতি নিয়ে সহকারীকে পুজোর দায়িত্ব দিতেন তিনি। তবে এ দিন নিজেই পুজো করেছেন। সহকারী শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এগিয়ে দিয়েছেন। আমরা ক’জনের সদস্য পবন বিশ্বাস বলেন, “উনি এই বছর সহকারীকে কোনও দায়িত্ব না দিয়ে একাই পুজো করে গেলেন। এ দিন উনি মণ্ডপে আসা মাত্রই হাসি-ঠাট্টায় জমিয়ে দিয়েছিলেন। কোনও সময়েই তাঁকে অসুস্থ বলে মনে হয়নি।’’ আপাতত সন্ধ্যাপুজো এবং দশমীর পুজো অন্য পুরোহিতকে দিয়ে করাতে উদ্যোগী আয়োজকেরা। তবে সেটাও শুধু নিয়ম রক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন