Health Centres

চিমটি কেটে দেখছি, সব ঠিক রয়েছে তো!

করোনার ছায়া পড়েছে গাঁয়ের গভীরেও। নিভু নিভু গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সামনেও ভয়ার্ত মানুষের আঁকাবাঁকা লাইন। কেমন আছে সেই সব অচেনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি, খোঁজ নিল আনন্দবাজারআধুনিক ভবন, নার্স থাকলেও কেন সর্বক্ষণের চিকিৎসক পাওয়া যায় না, তা নিয়ে আক্ষেপ শোনা যেত তাঁদের গলায়।

Advertisement

মৃন্ময় সরকার

ভগবানগোলা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

মাসকয়েক আগের ঘটনা। গায়ে জ্বর নিয়ে হাবাসপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন ভগবানগোলার কালীনগরের বাসিন্দা সাবেদা বেওয়া। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিৎসকের দেখা পাননি তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘নিরুপায় হয়ে আমায় ছুটে যেতে হয়েছিল কানাপুকুর গ্রামীণ হাসপাতালে। জ্বর গায়ে ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখাতে পেরেছিলাম।’’ শুধু সাবেদাই নন, আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের হাবাসপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে এতদিন অভিযোগের শেষ ছিল না।

Advertisement

আধুনিক ভবন, নার্স থাকলেও কেন সর্বক্ষণের চিকিৎসক পাওয়া যায় না, তা নিয়ে আক্ষেপ শোনা যেত তাঁদের গলায়। কিন্তু করোনা-ভয় এবং লকডাউনের জেরে ধুঁকতে থাকা এহেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রই এখন আমুল বদলে গিয়েছে। সূত্রের খবর, এখন সপ্তাহে ছ’দিন দু’জন করে চিকিৎসক রোগী দেখছেন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। যা দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই মুচকি হেসে বলছেন, ‘‘করানো-আতঙ্কই শ্রী ফিরিয়ে দিল হাসপাতালের।’’ হাবাসপুর এবং তার আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের বছর কুড়ি আগেও যে কোনও ছোট বড় অসুখে ছুটে যেতে হত কানাপুকুরে। কয়েক কিলোমিটার পথ উজিয়ে গ্রামীণ হাসপাতালে যাওয়ার মতো পথ-খরচ জোগাড় করা অনেকেরই সামর্থ্যের বাইরে ছিল।তাঁদের কথা ভেবেই বছর কয়েক আগে হাবাসপুরে ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হয়।

গ্রামবাসীদের বক্তব্য, শুরুতে পরিষেবা আশানুরূপ থাকলেও পরবর্তীকালে সর্বক্ষণ চিকিৎসকের দেখা মিলত না। স্বাস্থ্যকেন্দ্র সামাল দিচ্ছিলেন এক ফার্মাসিস্ট। তিনিই রোগীদের সমস্যা শুনে ওষুধ দিতেন। এ নিয়ে গ্রামবাসীদের অনেকের ক্ষোভ ছিল। চিকিৎসক না মেলায় অনেকেই চলে যেতেন ব্লক কিংবা মহকুমা হাসপাতালে। তাঁরাই এখন ভিড় করছেন হাবাসপুরে। রোগীদের আনাগোনায় প্রতিদিনই গমগম করছে হাবাসপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সুন্দর মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসী বুধবার বললেন, ‘‘যে হাসপাতালে চিকিৎসকের দেখা পাওয়াটা হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো ছিল, সেখানেই এখন সপ্তাহে ছ’দিন দু’জন করে ডাক্তারবাবু আসছেন। মাঝেমধ্যে নিজেকে চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছে করে, যা দেখছি ঠিক দেখছি তো!’’ ভগবানগোলা-১ ব্লক ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘‘ বহু মানুষ প্রতিদিন পরিষেবার সুযোগ নিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসছেন।’’ কিন্তু দু’জন চিকিৎসক পাঠাতে হচ্ছে কেন? ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর থেকে এই ব্লকে তিনটি থার্মাল স্ক্রিনিং যন্ত্র পাওয়া গিয়েছে। একটি দেওয়া হয়েছে কানাপুকুর গ্রামীণ হাসপাতালকে। হাবাসপুর এবং সুন্দরপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র পেয়েছে একটি করে। থার্মাল স্ক্রিনিং যন্ত্রে রোগীর পরীক্ষা যাতে দ্রুত করা যায়,তাই বাড়তি চিকিৎসক হাবাসপুরে যাচ্ছেন।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন