মমতার ‘অনুপ্রেরণা’য় দেদার পুরস্কার রাসে

উৎসব সরণীতে কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথেই হাঁটতে চলেছে রাসের নবদ্বীপ?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

বামাকালী প্রতিমা।-নিজস্ব চিত্র

উৎসব সরণীতে কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথেই হাঁটতে চলেছে রাসের নবদ্বীপ?

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরষ্কার প্রবণতার সঙ্গে রাজ্যের মানুষ শেষ ছ’বছর ধরে সড়গড় হয়ে গিয়েছেন। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন ছিল— দুর্গাপুজোয় বর্ণাঢ্য ভাসান-যাত্রা এবং উৎকর্ষতার বিচারে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের যথাযথ পুরস্কার।

সেই ছোঁয়াচ লাগল এ বার রাসের নবদ্বীপেও।

Advertisement

রাসের শোভাযাত্রা বা ‘আড়ংয়ে’ অংশগ্রহণকারীদের শৃঙ্খলা, সৌন্দর্য ও শালীনতার নিরিখে পুরষ্কার চালু করল নবদ্বীপ পুরসভা। আর্থিক মূল্য কুড়ি হাজার টাকা।

তবে শহরের প্রবীণ নাগরিকেরা অবশ্য রাসে পুরষ্কারের প্রদান শুরুর কৃতিত্ব দিতে চান মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে। নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হওয়া নবদ্বীপের রাস উৎসবের বয়স আড়াইশো পেরিয়েছে।। সূচনাপর্বে শক্তির উপাসক কৃষ্ণচন্দ্র কার্ত্তিক পূর্ণিমার রাতে নবদ্বীপের সেকালের নৈয়ায়িক পণ্ডিতদের শক্তির পুজো করতে শুধু মৌখিক উৎসাহ দেননি। রাজানুগ্রহের নিদর্শন স্বরূপ অকাতরে বিলিয়েছেন পারিতোষিকও। বাদ্যকর থেকে প্রতিমা শিল্পী কেউ বাদ পড়েনি তাঁর কৃপাদৃষ্টি থেকে।

যে সব নৈয়ায়িক ব্রাহ্মণেরা তাঁর কথামতো রাস পূর্ণিমা তিথিতে শক্তির উপাসনা করতেন, তাঁদের পুজো যাতে ষোড়শপচারে হতে পারে সেজন্য রাজকোষ থেকে অর্থ দেওয়া হত। এহেন রাজানুগ্রহে পুষ্ট রাস উৎসবের মেজাজ তাই স্বাভাবিক ভাবেই বাঁধা হয়ে গিয়েছিল একটু চড়া সুরে। তারপর এক সময়ে কালের নিয়মেই নদিয়ারাজের যুগ শেষ হয়েছে। তবে নবদ্বীপের রাসের সেই মেজাজটা যেন রয়েই গিয়েছে।

কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে রাস উৎসবকে সংস্কার করে সময় উপযোগী করে তোলার চেষ্টা। আর সূচনা লগ্নের মতোই সংস্কারের পর্বেও পারিতোষিকের ছড়াছড়ি। নবদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী রাসকে আরও সুশৃঙ্খল করার জন্য কয়েক বছর ধরেই প্রশাসন পুরষ্কার-তিরষ্কারে ভারসাম্যের নীতি নিয়েছে প্রশাসন। সারা বিশ্বের মানুষ আসেন চৈতন্যভূমির এই আশ্চর্য উৎসবের শরিক হতে। কিন্তু রাস উৎসবে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের বিরক্তি, ক্ষোভের কারন হয়ে দাঁড়ায়।

প্রকাশ্য মদ্যপানের বাড়াবাড়ি এবং তার ফলে রাসের সময় নানা ঘটনা উৎসবের মাধুর্যকে নষ্ট করে দেয়। তাই নবদ্বীপের নিজস্ব এই উৎসবকে পরিচ্ছন্ন করতে সর্বস্তরে প্রয়াস শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। নিয়মভঙ্গকারীদের জন্য কঠোর পুলিশি শাসন আর উৎসবকে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করার জন্য পুরষ্কার। এই দুয়ের প্রয়োগে কিছুটা হলেও পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে নবদ্বীপের রাসে।

জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েকবছর ধরেই সার্বিক ভাবে শ্রেষ্ঠ পুজোকে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে। অন্যদিকে নবদ্বীপ পুরসভা কয়েক বছর ধরে ‘রাস সৃজন সম্মান’ প্রদান করেছেন। এতদিন মোট ছ’টি ক্ষেত্রে ওই পুরষ্কার দেওয়া হত। এ বার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে শোভাযাত্রার পুরস্কার।

নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা। তিনি বলেন, “রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথ অনুসরণ করেই আমাদের এই শোভাযাত্রার পুরষ্কারের ভাবনা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন