সমস্যায় কুমোরপাড়াও। লালবাগে তোলা নিজস্ব চিত্র।
কখনও ঝিরঝিরে, কখনও মুষল ধারায়। শেষ মুহূর্তে বৃষ্টি-অসুর দেখা দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে বিরামহীন বর্ষণ। রাতভর বৃষ্টির পরে রবিবার সকাল থেকেও সূর্যের দেখা মেলেনি। মেঘের আঁচল ছিঁড়ে থেকে থেকেই ঝরে পড়েছে বৃষ্টি। পুজোর কেনাকাটায় কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমঙ্গের উপর অবস্থান করা নিম্নচাপ অক্ষরেখা।
মুর্শিদাবাদ জেলা চেম্বার অফ কমার্সের যুগ্ম সম্পাদকের অন্যতম স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “এমন আবহাওয়ায় পুজোর বাজারের অবস্থা খারাপ। বহরমপুর থেকে কান্দি, লালবাগ থেকে ডোমকল, লালগোলা থেকে জঙ্গিপুর সর্বত্র একই অবস্থা।”
এই সময় শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ভিড় থাকেই। কিন্তু সপ্তাহান্তে বৃষ্টি দানবের দাপটে অনেকেই বাড়ি থেকে বের হতে চাইছেন না। অনেকেই বহু দূর থেকে বহরমপুরে পুজোর বাজার করতে আসেন। তাঁরাও আসতে পারছেন না। খাঁ খাঁ করছে কাপড়-জুতো-স্টেশনারি দোকান। স্বপনবাবুর আশঙ্কা, এরকম বেশি দিন চললে ব্যবসায়ীরা আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়বেন। বস্ত্র ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে উদ্বিগ্ন প্রতিমা, মণ্ডপ সজ্জা, আলোক সজ্জার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরাও। কুমোরপাড়াতেও ভোগান্তির চিহ্ন খুবই স্পষ্ট। অনেক প্রতিমাই এখনও ঠিকমতো শুকোনো যায়নি। চিন্তার ভাঁজ শিল্পীদের কপালে। ঠিক সময় মতো মণ্ডপে পৌঁছে দেওয়া যাবে কিনা তাই নিয়েই সংশয়ে রয়েছেন তাঁরা।
শিল্পী তাপস দাস বলেন, “শেষ মূহূর্তের প্রতিমা নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু এই বৃষ্টিতে কাজ করতে পারছি না। পলিথিন টাঙিয়ে রং করা, চোখ আঁকা, সাজের কাজ চলছে।” শিল্পী অসীম পাল বলেন, “এক নাগাড়ে বৃষ্টিতে প্রতিমার গায়ের রং শুকোচ্ছে না। তার মধ্যে বনকাপাসির সাজ খোলা আকাশের নিচে সাজাতে হয়। সেটা হচ্ছে না। বড় চালি হলে তো আরও অসুবিধে।”
শুধু দুর্গোৎসব নয়। তারপর আবার রয়েছে ঈদুজ্জোহা। ব্যবসায়ীরা জানান, এই সময় বহরমপুর বাজারে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। অথচ এ বছর সেই ব্যবসা তেমন জমবে কিনা তা নিয়ে একটা সংশয় তৈরি হয়েছে।
খাগড়ার এক নামী বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, “গত দু’দিনের বৃষ্টিতে ক্রেতাদের ভিড়ও উধাও। অন্যান্য বছর এই সময়ে ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হত। অথচ এ বছর বৃষ্টি কিন্তু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।”
অন্য এক দোকানের কর্ণধার অলোক চৌরাসিয়া বলেন, “পুজোর মুখে বৃষ্টি হওয়ায় কেনাকাটা ব্যাপক হারে মার খাচ্ছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতাদের ভিড় থাকে অন্যান্য বছর। সন্ধ্যের পরে স্থানীয় মানুষজন ভিড় করেন। কিন্তু গত দু’দিন সেই সব ক্রেতাদের দেখা পাওয়া যায়নি।” খাগড়ার এক শাড়ি ব্যবসায়ী বলেন, “অন্যান্য বছর এই সময়ে অর্ডার দিয়ে মহাজনের ঘর থেকে ৫-৭ বার পোশাক নিয়ে আসা হয়ে যেত। কিন্তু ইদ-পুজোর মুখে বহরমপুর ও লগোয়া এলাকার ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও গ্রামের মানুষজনের দেখা পাইনি। তার উপরে পুজোর মুখে এমন আবহাওয়া দেখে নতুন করে মহাজনকে অর্ডার দিতেও ভরসা পাচ্ছি না।”
হতাশ ক্রেতারাও। শিক্ষিকা শুভব্রতা রায় যেমন বলেন, “পুজোর মুখে শনিবার-রবিবারের মত দু’টো দিন এ ভাবে নষ্ট হয়ে গেল। পুজোর বাজার করব বলে আগে থেকে কত পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। কিন্তু কিছুই হল না।” গৃহবধূ চন্দ্রানী হাজরা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগামী সপ্তাহে ভিড়ের চাপ খুব বেশি থাকবে। অসুবিধাই হবে।”
তবে ব্যবসায়ীরা অনেকেই অপেক্ষা করে আছেন একেবারে শেষ পর্যায়ের বাজার ধরতে। অনেকেই মনে করছেন সাধারণত এই সময়টায় পাট কাটা ও ধান বোনার কাজে ব্যস্ত থাকেন কৃষিজীবীরা। তাঁদের কেনাকাটা শুরু হয় ওই শেষ মুহূর্তে। আপাতত সে দিকে তাকিয়েই ব্যবসায়ীরা।