তিনি লোকসংস্কৃতি বিভাগে প্রধান। কলা ও বাণিজ্য ফ্যাকাল্টি-র ডিন। তাঁর আর পরিচয়, উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে তিনিই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী উপাচার্যের ভূমিকা পালন করে থাকেন। এ হেন অধ্যাপক কেউকেটা হবেন তাতে আর আশ্চর্যের কী? ক্ষমতাবলে কলা ফ্যাকাল্টির যে কোনও বিভাগের প্রধানকে শো-কজ করে থাকেন। অবশ্য তা নিয়ম মেনেই। এ ছাড়াও তিনি স্নাতকোত্তর স্তরের ভর্তি বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যানও। অর্থাৎ তাঁর দায়িত্ব নেহাত কম নয়।
অধ্যাপক তপন বিশ্বাস। কিন্তু এতগুলি পদে থাকলেও এরই মধ্যে সময় বের করে টিউশনটা দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন। নিয়ম থাক আর নাই থাক, শিক্ষামন্ত্রী যতই হুঁশিয়ারি দিন, অনেক অধ্যাপকই টিউশন দেন। তা নিয়ে মাঝেমধ্যে হইচই হয়, আবার তা থিতিয়েও যায়। মাস কয়েক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অডিটোরিয়ামের উদ্বোধনে এসে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের টোল সংস্কৃতিতে না জড়াতে পরামর্শ দেন। তিনি যে প্রকারান্তরে টিউশন না দেওয়ার কথাই সে দিন বলেছিলেন তা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ অধ্যাপক। তার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পড়ানো বন্ধ করেননি বলে জানাচ্ছেন পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আধিকারিকরা বলছেন, তপনবাবুর বিষয়টা একটু আলাদা। কারণ, তপনবাবু পরীক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। পদাধিকার বলে তিনি যে কোনও প্রশ্নপত্র দেখতে পারেন। এমন এক জন অধ্যাপক নীতিগতভাবে যেমন টিউশন দিতে পারেন না। তেমন কার্যকরী উপাচার্যের পদে থাকা কারও টিউশন দেওয়াটা বিধি বহির্ভূত।
তপনবাবু সে সেব বিধি-নিয়মের ধার ধারেন না। স্বমহিমায় নিজের মদনপুরের বাড়িতে সপ্তাহান্তে ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়ে চলেছেন। এত দিন দিব্যি চললেও গোল বেঁধেছে দিন কয়েক আগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র সটান লিখিত নালিশ ঠুকেছেন উপাচার্যের কাছে। অভিযোগে রয়েছে, তপনবাবু দীর্ঘদিন ধরেই নিজের বাড়ির দোতলায় স্নাতকোত্তর পড়ুয়াদের টিউশন দেন। তাঁর বিরুদ্ধে দূরের ছাত্রদের নোট বিক্রির অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্র।
উপাচার্য শঙ্করকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছি।’’ এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এটা একটা গর্হিত অপরাধ। অভিযোগের কথা শুনেছি। ওঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। আর তপন স্যার? তিনি প্রথমে স্বীকার করতেই চাননি, পরে অবশ্য বলেন, ‘‘আমাকে ১৫ দিন সময় দিন। এই অভিযোগ আর শুনবেন না।’’
তপনবাবু লোক সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান হলেও তাঁর উচ্চশিক্ষা বাংলায়।
অভিযোগ, বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রদের পড়ান। নিয়ম মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এতগুলি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তপনবাবু এটা করতে পারেন না। কলা ও বা়িণজ্যের ডিন হওয়ায় ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলরের অ্যাকাডেমিক প্রধান। কোন বিভাগের কোন শিক্ষক কোন পেপারের প্রশ্নপত্র তৈরি করছেন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন করছেন তাও জানতে পারেন তিনি।
তপনবাবুর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, পড়ুয়ারা বেরিয়ে আসছেন। এক ছাত্রকে প্রশ্ন করা হল, ‘‘কার কাছে পড়েন?’’ তাঁর উত্তর— কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের তপন স্যারের কাছে। তপনবাবু বলেন, ‘‘আমি পড়াই না। বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক প্রাক্তন ছাত্র পড়ান?’’ কিন্তু আপনার বাড়িতে তিনি কেন পড়ান? উত্তরে নানা কথা বলে, মূল প্রশ্নের উত্তরটাই দেননি তিনি।