এক জনকে আটক করে ক্ষীণ আলোর রেখা দেখছে পুলিশ

উত্তেজিত জনতার হাতে মুখ্যমন্ত্রী ঘেরাও হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও রানাঘাটে বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীর ধর্ষণের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ। যদিও সিআইডি-র একটি সূত্রের দাবি, তদন্তের পথে সামান্য হলেও একটা দিশা মিলেছে। নদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদের পরে মঙ্গলবার ঘটনাস্থল গাংনাপুরের এক যুবককে আটক করেছেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:১২
Share:

স্কুলের গেটে সিআইডি-র তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

উত্তেজিত জনতার হাতে মুখ্যমন্ত্রী ঘেরাও হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও রানাঘাটে বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীর ধর্ষণের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ। যদিও সিআইডি-র একটি সূত্রের দাবি, তদন্তের পথে সামান্য হলেও একটা দিশা মিলেছে। নদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদের পরে মঙ্গলবার ঘটনাস্থল গাংনাপুরের এক যুবককে আটক করেছেন গোয়েন্দারা। যদিও তার সঙ্গে প্রকৃত অপরাধীদের যোগাযোগ কতটা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

Advertisement

কিন্তু এই সামান্য অগ্রগতিটুুকু ছাড়া রাজ্য পুলিশের পক্ষে বলার মতো কিছু নেই। বরং, স্কুলের ভিতরে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ থেকে দুষ্কৃতীদের ছবি মেলা সত্ত্বেও তদন্তের এই হাল কেন, তা নিয়ে জনরোষ ক্রমশ বাড়ছে। সোমবার রানাঘাটে গিয়ে যার আঁচ সম্যক উপলব্ধি করেছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নের অস্বস্তি বাড়িয়ে মঙ্গলবার তদন্তে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কলকাতার আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজা। তাঁর কথায়, “দুষ্কৃতীদের কি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? সমস্যাটা কী, প্রশাসন তা-ও জানাচ্ছে না।” পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরেও পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের অদক্ষতা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

রাজ্য পুলিশের একটি সূত্র বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ থাকাটাই এ ক্ষেত্রে তদন্তকারীদের পক্ষে কাল হয়েছে! তাঁদের মতে, অনেক ঘটনার ক্ষেত্রে জনরোষ চাপা দিতে পুলিশ ঘটনার পরে পরেই কয়েক জন দাগি অপরাধীকে গ্রেফতার করে ফেলে। ওই অপরাধের সঙ্গে তাদের সরাসরি কোনও যোগাযোগ না-থাকা সত্ত্বেও। এক প্রবীণ পুলিশ অফিসারের কথায়, “এতে প্রাথমিক ধাক্কাটা সামাল দিয়ে পরে ধীরেসুস্থে প্রকৃত অপরাধীদের খোঁজ করা যায়। আর ওই দাগিরা পরবর্তী কালে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়।” কিন্তু রানাঘাটের ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ থাকায় যে কাউকে গ্রেফতার করে প্রকৃত অপরাধী বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

Advertisement

চাপড়ায় প্রতিবাদ মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।

এই অবস্থায় রাজ্যের সব পুলিশকর্মীই অন্য সব ছেড়ে রানাঘাটের দুষ্কৃতীদের খোঁজার কাজে মন দিয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। এই ঘটনার তদন্তের ভার নেওয়া সিআইডি-র এডিজি রাজীব কুমার নিজেই গত চার দিন ধরে রানাঘাটে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও কয়েক জন পদস্থ অফিসার। কিন্তু তার পরেও তদন্তের এক চুল অগ্রগতি না-হওয়াটা রাজ্য পুলিশের পক্ষে যে মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়, তা মানছেন প্রশাসনের বহু কর্তাই।

সন্ন্যাসিনীর ধর্ষণ নিয়ে কী ভাবে এগোতে চাইছেন গোয়েন্দারা? সিআইডি সূত্রের খবর, সিসিটিভি থেকে পাওয়া দুষ্কৃতীদের ফটো রাজ্যের জেলবন্দি দাগি অপরাধীদের দেখানো হয়েছে। দেখানো হচ্ছে অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনকেও। গাংনাপুর এলাকার পুরনো কিছু দুষ্কৃতীর বিষয়েও খবর নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, এই পদ্ধতিতে তদন্ত করে নদিয়ার দাগি অপরাধীদের কাছ থেকে ক্ষীণ সূত্র মিলেছে। সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে চাকদহের এক দুষ্কৃতীর চেহারার মিল রয়েছে জানিয়ে ওই অপরাধীরা বলেছে, ডাকাতি করতে গিয়ে ধর্ষণ-শ্লীলতাহানি করার অভ্যাস রয়েছে ওই ব্যক্তির। তাই তারা আর ওই দুষ্কৃতীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না। ওই ব্যক্তি ২০১১-’১২ সালে গাংনাপুর ও খড়দহ থানায় ডাকাতির মামলায় ধরা পড়েছিল। তার সঙ্গে রাজ্যের এবং বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। ওই ব্যক্তিকে আটক করে জেরা করা হচ্ছে।

সিআইডি সূত্রের খবর, সিসিটিভি থেকে পাওয়া দুষ্কৃতীদের যে ফটো ও স্কেচগুলি সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে, তার পাঁচ নম্বরে থাকা দুষ্কৃতীই সে দিনের ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছিল। তার নির্দেশেই প্রথমে স্কুলের নিরাপত্তা রক্ষীর হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। তার পর অন্য সন্ন্যাসিনীদেরও সে-ই ঘরে আটকে রাখার নির্দেশ দেয়। আর তালিকার ছ’নম্বরে থাকা দুষ্কৃতী অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করেছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন