পাঁচ দিন পরে জেরা নিরাপত্তারক্ষীকে

গাংনাপুর স্কুলে ডাকাতির ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া তিন নিরাপত্তাকর্মীর যোগসাজসের ইঙ্গিত শনিবারই দিয়েছিল জেলা পুলিশ। তবে টেলিফোনে তাঁদের এক জনের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া এ ব্যাপারে তেমন এগোয়নি তদন্ত। ঘটনার চার দিন পরে, বুধবার সেই বরখাস্ত নিরাপত্তারক্ষীদের এক জনকে জেরা করল সিআইডি। এ দিন প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে স্বপন মালাকার নামে ওই নিরাপত্তারক্ষীকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খুঁটিয়ে জেরা করেন সিআইডি-র কর্তারা।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ ও সৌমিত্র সিকদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪০
Share:

গাংনাপুর স্কুলে ডাকাতির ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া তিন নিরাপত্তাকর্মীর যোগসাজসের ইঙ্গিত শনিবারই দিয়েছিল জেলা পুলিশ। তবে টেলিফোনে তাঁদের এক জনের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া এ ব্যাপারে তেমন এগোয়নি তদন্ত।

Advertisement

ঘটনার চার দিন পরে, বুধবার সেই বরখাস্ত নিরাপত্তারক্ষীদের এক জনকে জেরা করল সিআইডি। এ দিন প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে স্বপন মালাকার নামে ওই নিরাপত্তারক্ষীকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খুঁটিয়ে জেরা করেন সিআইডি-র কর্তারা।

গাংনাপুরের ডন বস্কো পাড়ার ওই কনভেন্ট থেকে এক কিলোমিটার দূরে বেগোপাড়া-অ্যান্টনিপাড়ায় বাড়িতেই দেখা মিলল স্বপনের। তাঁর প্রশ্ন, “রটে গিয়েছিল ঘটনার পরেই আমি নাকি পালিয়েছি, আমি কেন পালাতে যাব বলতে পারেন?”

Advertisement

বছর আটত্রিশের ওই যুবকের দাবি, স্কুল থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়নি। পারিবারিক কারণেই গত বছর ১১ নভেম্বর স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী অণিমা এখনও ওই কনভেন্টে চাকরি করেন। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে অনিয়মিত হওয়াই ছিল স্বপনের বিরুদ্ধে সব থেকে বড় অভিযোগ। নিয়মনিষ্ঠ স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর এই ‘বিশৃঙ্খলা’ বরদাস্ত করতে রাজি ছিলেন না। স্কুলের এক কর্তা জানান, সময়ে স্কুলে না-আসার অভিযোগ ছাড়াও অন্য কিছু মতবিরোধের জেরেই শেষ পর্যন্ত স্বপনকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সাত বছর আগে ওই কনভেন্টের পাঠাগার পরিষ্কার করার কাজে যোগ দিয়েছিলেন স্বপন। বছর দেড়েক আগে নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে কাজ শুরু করেন।

স্বপন বলেন, “শনিবার ভোরে ঘটনা শুনেই চমকে উঠেছিলাম। মাদার সুপিরয়র অত্যন্ত ভাল মানুষ। আমাকেও খুব স্নেহ করতেন। তাঁকে দেখতে আমি হাসপাতালেও গিয়েছিলাম।” সেখানে অবশ্য তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তাঁর দাবি, “আমার স্ত্রী এখন মাদারকে দেখভাল করছে। ওর কাছেই জানতে পেরেছি, এখন একটু ভাল আছেন উনি।”

স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানায়, চাকরি খোয়ানোর মাস খানেক পরেই স্বপন ওই স্কুলে এসে অধ্যক্ষার কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন। তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর বাগবিতণ্ডাও হয়। তারই ‘বদলা’ কি ওই ঘটনা?

পুলিশের একাংশ তেমন সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

এ দিন নিজের বাড়িতে বসে স্বপন অবশ্য স্কুলে গিয়ে টাকা দাবির অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, একই স্কুলে স্বামী-স্ত্রীর চাকরি করা নিয়ে ‘অনেক কথা’ উঠছিল। তিনি বলেন, “সংসারে শান্তি বজায় রাখতেই চাকরিটা শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলাম।” পরে অবশ্য তিনি ভুল বুঝতে পেরে ফের চাকরিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে স্কুলে গিয়েছিলেন। দিন কুড়ি কাজও করেন। মাসান্তে ৪৩৭৫ টাকা মাইনেও পেয়েছিলেন বলে জানান তিনি। কিন্তু ইতিমধ্যে তাঁর পদত্যাগপত্র দিল্লিতে গৃহীত হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত চাকরিটা ছাড়তেই হয়েছিল তাঁকে। এ দিন সিআইডি কর্তাদেরও এ কথা জানিয়েছেন তিনি।

এ দিন স্বপন বলেন, “আমার দুটো ফোন নম্বরই পুলিশকে দিয়েছি। বলেছি, যখন ডাকবেন চলে আসব। তদন্তের স্বার্থে সবরকম সাহায্য করব। যারা এ কাজ করেছে তাদের চরম শাস্তি হওয়া দরকার।”

তবে, স্বপন একা নন, স্কুল কর্তৃপক্ষ পরে আরও দু-জন নিরাপত্তারক্ষীকে বরখাস্ত করেছিলেন। নাম ঠিকানা জোগাড় করলেও পুলিশ অবশ্য তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য আশ্বস্ত করছেন, “সময় হলেই কথা বলা হবে তাঁদের সঙ্গে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন