কুয়াশা বেড়েছে, বাড়ছে পাচারও

এখনও জাঁকিয়ে শীত পড়েনি। তবু ভোর-ভোর সীমান্তের তার-কাঁটা কুয়াশা মেখে দাঁড়িয়ে থাকছে নিত্য। ওই কুয়াশাকে ঢাল করে গত কয়েক দিন ধরে ডোমকল-জলঙ্গি-রানিনগর সীমান্তে বেড়েছে পাচার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:০৮
Share:

এখনও জাঁকিয়ে শীত পড়েনি। তবু ভোর-ভোর সীমান্তের তার-কাঁটা কুয়াশা মেখে দাঁড়িয়ে থাকছে নিত্য। ওই কুয়াশাকে ঢাল করে গত কয়েক দিন ধরে ডোমকল-জলঙ্গি-রানিনগর সীমান্তে বেড়েছে পাচার।

Advertisement

গত শনিবার গভীর রাতে গরু পাচারের সময়ে সীমান্ত এলাকা থেকে দু’জন গ্রেফতারও হয়েছে। তাই চরের জমিতে চাষ করতে যেতে বাধা দিচ্ছেন বিএসএফ। তা নিয়েও গ্রামবাসীদের সঙ্গে বিএসফের বিবাদ বাধে। কিন্তু নিরীহ চাষি সেজে পাচারকারীদের যে সীমান্ত জুড়ে দাপাদাপি শুরু করেছে, তেমনি সজাগ রয়েছে বিএসএফও।

খুব ভোরে উঠে মাঠে যাচ্ছিলেন চর-রাজাপুরের ইফতিকার খোন্দেকর। কাঁটাতার পেরিয়ে ওপারের মাঠে চাষ করতে যাবেন। যেমন যান নিত্য। কিন্তু এ বার কুয়াশা ফুঁড়ে সামনে উপস্থিত দুই বিএসএফ জওয়ান। শীতকাল বলে একটি জ্যাকেটের উপরে বড় চাদর। সেই চাদরেই ঢাকা মুখ। সীমান্তরক্ষীরা তাঁর সেই চাদর খুলিয়ে জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে তল্লাশি শুরু করলেন। কাঁপতে কাঁপতে ইফতিকার যতই কাতর স্বরে তাঁদের তাড়াতাড়ি তল্লাশি শেষ করতে বলেন, তাদের চোখও ততই রক্তবর্ণ হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা বেলা ফেরার পথেও তাই। ভোটের কার্ড দেখিয়েও নিস্তার মেলে না। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, কত ক্ষণে তল্লাশি শেষ হবে। আসলে ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় সীমান্তও। কালবৈশাখীর ঝড় উঠলেই যেমন জলপাই রঙের পোশাক পরা বিএসএফ জওয়ানের হাতের রেডিও ট্রানজিস্টারে বেজে ওঠে--‘কড়া নজর রাখো, আজ গরু পার হতে পারে’। তেমনই অমাবস্যার রাতে গাছের ডালপালা ভেদ করে চার ব্যাটারি টর্চের তীক্ষ্ম আলো শূন্যে ঘোরাফেরা করলে চকিতে বুঝে নিতে হয়, এটা কীসের সঙ্কেত! আবার ভরা পাটের মরসুমে তরকাঁটার ওপারের পাটগাছ নড়ে উঠলে মুহূর্তেই আন্দাজ করে নিতে হয় ওটা নিছক বাতাসের সৌজন্যে নাকি ঘন, লম্বা পাটগাছের আড়ালে ওঁত পেতে রয়েছে অন্য কোনও বিপদ। তবে সব ঋতুকেই ছাপিয়ে যায় শীতকাল। বিএসএফ, প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন যে, সীমান্তের বারোমাস্যায় এটাই সব থেকে আতঙ্কের ঋতু। তাই শীতকালের কথা মাথায় রেখে এক দিকে সীমান্তে যখন জারি করা হয় অতিরিক্ত সতকর্তা। অন্য দিকে তখন তক্কে তক্কে থাকে চোরাপাচারকারীরাও। ফলে গোটা শীতকাল জুড়েই পৌষমাস ও সর্বনাশের সেই চেনা প্রবাদটা পাক খেতে থাকে সীমান্তের আনাচে কানাচে।

Advertisement

এই সময় বিএসএফও সমঝে চলে কুয়াশাকে। পাচারকারীদের তাই এই সময়টা সোনায় সোহাগা। এক বিএসএফ কর্তার কথায়, ‘‘আবহাওয়ার খোঁজখবর সাধারণ মানুষের থেকে বেশি রাখে সীমান্তের পাচারকারীরা। রাতের দিকেই আভাস পাওয়া যায় কুয়াশা কেমন হবে। সেই ভাবেই ওরা অপারেশনের ছক করে নেয়। সতর্ক থাকি আমরাও। কিন্তু সবসময় শেষরক্ষা হয় না।” ওই কর্তার কথায়, “কুয়াশাকে সমঝে চলি আমরাও। কারণ কুয়াশার সঙ্গে মোকাবিলা করার মতো অত্যাধুনিক কোনও যন্ত্র আমাদের হাতে এখনও পর্যন্ত নেই। ঘন কুয়াশায় কাছের জিনিসও দেখা যায় না। আরও বিপজ্জনক হল, কুয়াশার মধ্যে কার্যত অচল হয়ে পড়ে বাইনোকুলার, এসএসটিআই কিংবা নাইট ভিশন ক্যামেরাও।” বিএসএফের এই অসহায়তার কথা খুব ভাল করেই জানে পাচারকারীরা। সেই কারণেই সারা বছর টুকিটাকি পাচার চললেও শীতকালে সেটা অনেকগুণ বেড়ে যায় বলেও কবুল করেছেন বিএসএফেরই এক কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন