তবুও খামতি পাশের হারে

চলতি বছর নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে মাদ্রাসার পরীক্ষায় বসা এবং মোট পাশের সংখ্যায় ছেলেদের পিছনে ফেলে দিয়েছিল মেয়েরা। কিন্তু পাশের হারে ছাত্রদের থেকে পিছিয়ে পড়েছে তারা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ০২:১০
Share:

অনেকটা এগিয়েও যেন জয়ের শেষ বিন্দুটা স্পর্শ করা হল না মাদ্রাসার ছাত্রীদের।

Advertisement

চলতি বছর নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে মাদ্রাসার পরীক্ষায় বসা এবং মোট পাশের সংখ্যায় ছেলেদের পিছনে ফেলে দিয়েছিল মেয়েরা। কিন্তু পাশের হারে ছাত্রদের থেকে পিছিয়ে পড়েছে তারা।

প্রশাসনিক কর্তা এবং শিক্ষাবিদদের অনেকেরই মত, পরিবর্তনের শিকড় বোধহয় সমাজের একেবারে অন্তঃস্থলে পৌঁছোয়নি। সেই গভীরতা না-ছুঁলে মেয়েদের প্রকৃত উত্থান থমকে যাবে।

Advertisement

মুর্শিদাবাদে ৩৬৭৯ জন ছাত্র মাদ্রাসা পরীক্ষায় বসেছিল। পাশ করেছে ৩১০৯ জন। ছাত্রের পাশের হার ৮৪.৫১ শতাংশ। সেখানে ৮৯৭৬ জন ছাত্রীর মধ্যে পাশ করেছে ৬৮৮৬জন। তাদের পাশের হার ৭৬.৭২ শতাংশ। আলিম পরীক্ষায় ৬০১ জন ছাত্রের ভিতর ৪৬৭ জন পাশ করেছে। আর ১২৪৪ জন ছাত্রীর মধ্যে পাশ করেছে ৮৩৭ জন। ফা‌জ়িলে ৩০৪ জন ছাত্রের মধ্যে পাশ করেছে ২৯২ জন, ৩২৩ জন মেয়ের মধ্যে পাশ করেছে ২৩৯ জন। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই পাশের হারে পিছনে রয়েছে ছাত্রীরা।

একই অবস্থা নদিয়াতেও। নদিয়ায় মাদ্রাসা পরীক্ষায় ৭৯৫ জন ছাত্রের মধ্যে পাশ করেছে ৬৭৫ জন। পাশের হার ৮৪.৯১ শতাংশ। ১৫৮১ জন ছাত্রীর মধ্যে ১২০৮ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৭৬.৪১ শতাংশ। আলিম পরীক্ষায় ছাত্রদের পাশের হার ৭৮.০৯ শতাংশ আর ছাত্রীদের ৫৭.৩২ শতাংশ।

আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জেলার বন্ধনীতে থাকা মুর্শিদাবাদের পরিচিতি ছিল নাবালিকা বিয়ে, নাবালিকা-মাতৃত্ব, মেয়ে পাচার, প্রসূতি মৃত্যুর মতো ঘটনার কেন্দ্র হিসাবে। প্রশাসনিক কর্তাদের মাথাব্যথার কারণ ছিল জেলার উন্নয়ন মাপকাঠির পড়তি রেখচিত্র। তবু তার মধ্যেই একটু-একটু করে মেয়েদের ভিতর ঢুকে পড়েছিল ঘুরে
দাঁড়ানোর জেদ।

এই জেলাতেই কন্যাশ্রী যোদ্ধারা সবচেয়ে বেশি নাবালিকার বিয়ে আটকেছে। মাদ্রাসার মেয়েরা ফুটবল পায়ে মাঠে নেমে চমকে দিয়েছে সকলকে। সাইকেল প্রতিযোগিতায় নেমে বাহবা কুড়িয়ে এসেছে দিল্লি থেকে। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকারাও মেয়েদের লক্ষ্য ছোঁয়ার জেদের জ্বালানি হয়েছেন অনেক ক্ষেত্রে। উড়ান শুরু হয়েছিল, কিন্তু তা প্রত্যাশিত উচ্চতায় পৌঁছল না কেন?

বেলডাঙ্গার দেবকুন্ডু শেখ আব্দুর রাজ্জাক মেমোরিয়াল গার্লস হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুনের কথায়, "ছেলেরা টিউশন নিতে যায়, অধিকাংশ মেয়েকে বাড়ি থেকে তা করতে দেওয়া হয় না। মেয়ের পিছনে অভিভাবকেরা পয়সা খরচ করতে চান না।’’

নদিয়ার চাপড়ার হাটখোলা হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক খাদেমুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘মেয়েদের উল্টে তাদের বাড়ির কাজকর্ম করতে হয়। কাজের জন্য বাড়ির লোকের চাপে মেয়েদের স্কুল কামাই করতে হয়। পড়ায় তারা কম সময় দিতে পারে।’’ প্রশাসন একটু এগিয়ে এলে, সচেতনতা আরও বাড়লে এই বাধাও দূর হবে বলে তাঁদের আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন