৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক

হকারদের বিক্ষোভে আটকে সড়ক সম্প্রসারণ

ব্যবসায়ীদের বাধায় আটকে যেতে বসেছে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। বেথুয়াডহরি বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, ফুটপাথের হকারদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো যাবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৮
Share:

ব্যবসায়ীদের বাধায় আটকে যেতে বসেছে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। বেথুয়াডহরি বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, ফুটপাথের হকারদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো যাবে না। দিন কয়েক আগে উচ্ছেদে সংক্রান্ত বিষয়ে প্রচারে বেড়িয়ে বাধা পান প্রশাসনের লোকজন। আটকে দেওয়া হয় তাঁদের গাড়ি। এ দিকে জাতীয় স়ড়ক কর্তৃপক্ষের সাফ কথা, ফুটপাথের হকারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনও নিয়ম নেই। এ দিকে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিপূরণের দাবিতে অনড় রয়েছে। ফলে ভাঙাচোরা-সঙ্কীর্ণ রাস্তা যে কবে মসৃন হবে, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেধেছে।

Advertisement

২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে কৃষ্ণনগরের বাহাদুরপুর থেকে মুর্শিদাবাদের সারগাছি পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। কিন্তু ২০১৪ সালের অগস্ট মাসে ওই সংস্থার আর্থিক সমস্যা এবং জমিজটে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারনের কাজ আটকে যায়। ওই সময় প্রায় ৩৯ কিলোমিটার রাস্তার সম্প্রসারনের কাজ হয়েছিল। ফের গত বছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জুলাই মাসে কৃষ্ণনগরের বাহাদুরপুর থেকে মুর্শিদাবাদের সারগাছি পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কিছু অংশের জমি জটে তা বার বার আটকে যাচ্ছে।

ধুবুলিয়ায় উচ্ছেদ কাজ শেষ হয়েছে বছর দুয়েক আগে। কিন্তু সমস্যা শুরু তারপর থেকেই। বার বার উচ্ছেদ অভিযান থমকে যাচ্ছে নাকাশিপাড়া ও জেলার শেষপ্রান্ত পলাশিতে।

Advertisement

নাকাশিপাড়ার বেথুয়াডহরি, জগদানন্দপুর এবং খিদিরপুরের প্রায় ৫০ জন ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি। প্রশাসনের বক্তব্য, তাঁরা ভাড়াটিয়ার প্রমানপত্র দাখিল করতে পারেননি। তবে তাঁদের পরিচয়পত্র দেখানের জন্য পুনরায় সময় দেওয়া হবে। কিন্তু এরই মধ্যে গোঁ ধরে বসেছেন প্রায় দেড়শো জন ফুটপথের হকার। তাঁদের দাবি, ক্ষতিপূরণ দিয়ে উচ্ছেদ করা যাবে না। গত শুক্রবার উচ্ছেদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইক-প্রচার করা হচ্ছিল। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী ক্ষতিপূরণদের দাবি তুলে সেই প্রচার বন্ধ করে দেন। বাসিন্দাদের অসন্তোষের আঁচ পেয়ে প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করে দেয়। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা
বলছেন, “ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীর প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র যারা জমা দিতে পেরেছেন তাঁদের ইতিমধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। ফের ভাড়াটিয়াদের প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছি। ৯-১০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্প করা হবে। সেখানে কাগজপত্র দেখাতে পারলেই মিলবে ক্ষতিপূরণ।” ২৪৫ জন ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। আরও ২২ জন ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য। ব্যবসায়ী সমিতি যে ৫০ জনের কথা বলছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারলে তাঁদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এমনটাই জানালেন জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা। অন্যদিকে কালীগঞ্জের গোবিন্দপুর, মিরা ও পলাশিতে ১৪-১৫ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদ অভিযানের দিন ঠিক হয়েছে।

কিন্তু হকারেরা কি ক্ষতিপূরণ পাবেন? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, হকারদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম নেই।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কোন কোন এলাকায় উচ্ছেদ করতে হবে, তার তালিকা প্রশাসনের কাছে রয়েছে। দখল মুক্ত না হলে কাজ করা যাচ্ছে না। বেথুয়াডহরি ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি হরিদাস দে বলছেন, “আমরাও চাই জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ হোক। কিন্তু এখনও প্রায় ৫০ জন ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। ফুটপাথের হকারদেরও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’’

কিন্তু নিয়ম না থাকায় প্রশাসনও সে ক্ষতিপূরণ দিতে অপারগ। এই অবস্থায় জাতীয় সড়ক সংস্কার বিশ বাঁও জলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন