ন্যাড়া ছাদে ঝুলছে ভয়

বাড়ির লোকজন খেয়াল করেননি। তবে সকলের সম্বিৎ ফিরল আমনের চিৎকারে। পড়িমড়ি করে আমনের বাবা-মা ছুটলেন ছাদে।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

ভরদুপুরে সিঁড়ির দরজাটা খোলা ছিল। তেমনটাই থাকে। শীতের দিনে কত বার যে ছাদে ওঠানামা করতে হয় তার ইয়ত্তা থাকে না। বছর আড়াইয়ের আমন বিশ্বাস ছোট্ট ছোট্ট পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে পড়েছিল সটান ছাদে। বাড়ির লোকজন খেয়াল করেননি। তবে সকলের সম্বিৎ ফিরল আমনের চিৎকারে। পড়িমড়ি করে আমনের বাবা-মা ছুটলেন ছাদে।

Advertisement

দিনকয়েক আগে ডোমকলের ওই ঘটনা মনে পড়লে এখনও কেঁপে উঠছেন আমনের বাবা। তিনি বলছেন, ‘‘ছাদে গিয়ে মাথাখারাপ হওয়ার জোগাড়। দেখি আমন ছাদের একেবারে ধারে বসে নীচের দিকে তাকিয়ে লোকজন দেখছে আর নিজের মনে চিৎকার করছে। কী ভাবে যে ছুটে গিয়ে ওকে সেখান থেকে নিয়ে এসেছি নিজেও জানি না। আর একটু হলেই কত বড় বিপদ হয়ে যেত বলুন তো?’’

এ ক্ষেত্রে খুব জোর বেঁচে গিয়েছে আমন। কিন্তু নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় এই সময় ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ফি বছরই বাড়ে। জখমদের তালিকায় শিশুদের সংখ্যাই বেশি। দুই জেলার হাসপাতাল থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, গত বছরে প্রায় ৬০ জন শিশু ছাদ থেকে পড়ে জখম হয়েছে। এক জন মারা গিয়েছে। তবে এই বছরে জখমের সংখ্যাটা এখনও পর্যন্ত ২১। নদিয়ায় সংখ্যাটা কমবেশি ১১। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিপদটা বাড়ে শীতকালে।

Advertisement

তার কারণও আছে। ছাদে উঠে কুল পাড়া, বড়ি, লেপ-কাঁথা শুকোতে দেওয়া কিংবা রোদ পোহানোর জন্য শীতের দিনে ছাদে ওঠার হিড়িক বেড়ে যায় অনেকটাই। বড়দের সঙ্গে সঙ্গে ছাদে ওঠে খুদেরাও। লাখ কয়েক টাকা খরচ করে বাড়ি তৈরি করা হলেও বহু ছাদ ন্যাড়া হয়ে পড়ে থাকে। ছাদের চারপাশটা আর ঘেরা হয় না। বড়রা একটু অন্যমনস্ক হলেই বিপদ ঘটে।

রঘুনাথপুর গ্রামের আলিউল ইসলামের মেয়ে আবিদা এ ভাবে ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর জখম হয়েছিল। পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আলিউল বলছেন, ‘‘ছাদে রোদ থাকে বেশ বেলা পর্যন্ত। নীচে ঠান্ডা লাগছিল বলে মায়ের সঙ্গে ছাদে ভাত খেতে উঠেছিল মেয়েটা। ওর মা একটু নজর ঘোরাতেই এমন অঘটন।’’

ডোমকল এসিএমওএইচ প্রবীর মাণ্ডি বলেন, ‘‘বাড়ি তৈরি করলেও ছাদের চারপাশটা ঘেরা অনেকেই বিলাসিতা বলে মনে করেন। ফলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকে।’’ ডোমকল মহকুমা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন কবীর বলছেন, ‘‘সারাবছর দু’একটা এমন ঘটনা ঘটলেও শীতে সংখ্যাটা বেড়ে যায়। ফলে ফি বছর এই সময়ে প্রায়ই এমন ঘটনার সাক্ষী থাকতে হয় আমাদের। লোক সচেতন হলে বিপদ অনেকটাই কমে যায়।’’

করিমপুরের এক মহিলা বলছেন, ‘‘খুব শিক্ষা হয়েছে। মেয়েটা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে। ছাদ থেকে পড়ে হাত-পা ভেঙে ছিল। তার পরে এসেই ছাদের চারপাশ ঘিরে দিয়েছি।’’

(সহ প্রতিবেদন: কল্লোল প্রামাণিক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন