পুলিশকর্মী দেবাশিস গড়াইয়ের বাড়ি বীরভূমে। নদিয়ার মায়াপুর পুলিশ ব্যারাক থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যারাক থেকে উদ্ধার পুলিশকর্মীর ঝুলন্ত দেহ। বুধবার সকালে এ নিয়ে শোরগোল কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলা মহলে। জানা গিয়েছে, মৃত পুলিশকর্মীর নাম দেবাশিস গড়াই। বয়স ৪২ বছর। বুধবার মায়াপুর পুলিশ ব্যারাক থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান সহকর্মীরা। কী ভাবে মৃত্যু, আত্মহত্যা কি না, এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে একটি ‘আনসেভড’ নম্বর থেকে ভিডিয়ো কল এসেছিল ওই পুলিশকর্মীর কাছে। কয়েক মিনিট তাঁকে ভিডিয়ো কলে কথা বলতে দেখেছেন সহকর্মীরা। তার কয়েক ঘণ্টা পর সকালে পুলিশকর্মীর দেহ উদ্ধার হয়েছে।
মৃত পুলিশকর্মীর বাড়ি বীরভূমের নানুরে। কর্মসূত্রে তিনি থাকতেন নদিয়ার মায়াপুরে পুলিশ ব্যারাকে। বিবাহিত ওই পুলিশকর্মী বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের সূত্রে খবর। মৃত্যুর নেপথ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন রয়েছে কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ। তবে জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ একটি ‘আনসেভড’ নম্বর থেকে ভিডিয়ো কল আসে দেবাশিসের কাছে। তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হয় বলে অভিযোগ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্মী জানান, সকালে ব্যারাক থেকে ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায় দেবাশিসের। তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে মায়াপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেবাশিসকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশকর্মীর দেহ শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
মৃতের ঘনিষ্ঠদের সূত্রে অভিযোগ, ফাঁদ পেতে পুলিশকর্মীকে ফাঁসানো হয়েছিল। বিবাহ-বহির্ভূত একটি সম্পর্কে জড়িয়ে মানসিক চাপে ছিলেন দেবাশিস। তাঁদের কিছু ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি দেখিয়ে ‘প্রেমিকা’ ব্ল্যাকমেল করতেন। বলা হত, সম্পর্কের কথা দেবাশিসের স্ত্রীকে জানিয়ে দেবেন। এমনকি, ভয় দেখিয়ে এককালীন কয়েক লক্ষ টাকা দাবি করেন ওই ‘রহস্যময়ী’। পুলিশকর্মীর ঘনিষ্ঠদের একাংশের দাবি, ক্রমাগত মানসিক চাপ এবং পারিবারিক অশান্তির ভয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন পুলিশকর্মী।
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, মৃত পুলিশকর্মীর মোবাইল পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। মৃত্যুর আগে হোয়াট্সঅ্যাপে তিনি কার কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ। জানা যাচ্ছে, ‘কনট্যাক্ট লিস্ট’-এ সেভ করা নেই এমন একটি নম্বর থেকে ভিডিয়ো কল এসেছিল দেবাশিসের কাছে। ৪ মিনিটের বেশি সময় দু’জনের কথা হয়। ওই ভিডিয়ো কলে কি পুলিশকর্মীকে হুমকি বা আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছিল? জবাব খুঁজছে পুলিশ। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার ডিএসপি মুত্তাকিনুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের এক সহকর্মীর দুঃখজনক ভাবে মৃত্যু হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। দেহ ময়নাতদন্তে র জন্য পাঠানো হয়েছে। আমরা মৃত পুলিশকর্মীর পরিবারকে খবর দিয়েছি।’’ তিনি জানান, মৃত্যুর কারণ এখনও পরিষ্কার নয়। সে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।