হাসপাতালে তাঁরা আর স্বস্তি বোধ করছেন না। রোগীর বাড়ির লোকের ‘শাসনে’ নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদের আনাচ কানাচে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন গ্রামীণ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে তাঁদের বদলি এবং ইস্তফার হিড়িকও পড়েছে। ডাক্তার পেটানোর এই আবহে কপালে ভাঁজ পড়েছে দুই জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের। পাল্টা একটা প্রশ্নও উঠেছে। স্বাস্থ্য কর্তা এবং প্রবীণ ডাক্তারদের অনেকেই মনে করছেন, অবহেলা না হোক, গ্রামের মানুষের নাড়ি বুঝতে অক্ষম শহুরে নব্য চিকিৎসককুলের ত্রুটি থাকছে না তো!
বহরমপুরের প্রবীণ সাবিত্রীপ্রসাদ গুপ্ত বলছেন, ‘‘ছেলেবেলায় দেখেছি, ডাক্তাররা বেশির ভাগই ছিলেন স্থানীয়। কেউ বা অন্য হাসপাতাল থেকে বদলি হয়ে এসেছেন বটে কিন্তু থিতু হয়েছেন এখানেই। মানুষের সঙ্গে তাঁদের মেলামেশাও ছিল নিরন্তর। ভুল বোঝার অবকাশটাই ছিল না।’’
ষাটের দশকের সহোদর দুই ডাক্তার কালুবাবু ও ঝালুবাবুর কথা বহরমপুরের মানুষ মনে রেখেছেন। এখনও গল্প-কথায় ওঠে আশির দশকে বহরমপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাটিয়ে যাওয়া সল্টলেকের বাসিন্দা, সদ্যপ্রয়াত দেবব্রত সেনের নাম। কিছু অসাধু বা দায়িত্বজ্ঞানহীন চিকিৎসক যেমন আছেন, নিজের সংগ্রহে থাকা অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম এনে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার করেছেন, এমন চিকিৎসকও বিরল নন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসকের কটাক্ষ, ‘‘চিকিৎসকের অভাব তো আছেই, নিরাপত্তাও নেই। রোগ না সারিয়ে ফেসিয়াল-ব্লিচিংয়ে সুন্দর করার চেষ্টা করলে যা হওয়ার কথা, তাই ঘটছে।’’
যেমন ঘটল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন রোগী। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তিকালীন তাঁর উপরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও চিকিৎসকরা জানাতে পারেননি—রোগীর ঠিক কী হয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিন দিন ধরে ছটফট করার পরে রোগীকে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে রেফার করা হয়। ওই রোগীর বাড়ির লোকজনের কথায়, ‘‘তা হলে তিন দিন ধরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীকে বিনা চিকিৎসা ফেলে রাখা কী প্রয়োজন ছিল! আগেই যদি কলকাতার হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হত তাহলে তিন দিন ফেলে রোগীকে যন্ত্রণা পোহাতে হত না।’’
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস্ ফোরামের সভাপতি রেজাউল করিম জানান, নানা কারণে চিকিৎসক-রোগীর বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। চিকিৎসার খরচের বহর বাড়লেও রোগের কারণ, জানাতে বিরূপ চিকিৎসকদের কাছে তাই ভরসা পাচ্ছেন না বাড়ির লোক।
মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘একশ্রেণির চিকিৎসক নিজেদের বড় বেশি পণ্য করে তুলেছেন। সমস্যা বাড়ছে তাতেই।’’ তারই আঁচ পড়ছে গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকদের উপরে।
(শেষ)