বাজেয়াপ্ত মোবাইল। নিজস্ব চিত্র
অষ্টম শ্রেণির অঙ্ক ক্লাস। নাকের কাছে নেমে এসেছে চশমার কাচ, ব্ল্যাকবোর্ডে উৎপাদক বিশ্লেষণ করছেন স্যর।
আচমকা সবাইকে অবাক করে মাঝের বেঞ্চ থেকে তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল— ‘কাঁটা লা গা আ আ...’। কাঁটা ঠিক কোথায় লাগল খোঁজ নেওয়ার আগেই অন্য বেঞ্চ থেকে আচমকা লুঙ্গি ড্যান্স। বিরক্ত হয়ে ক্লাস থেকেই চলে গেলেন স্যর।
রঘুনাথগঞ্জ শ্রীকান্তবাটি হাইস্কুলে এ প্রায় নিত্যদিনের মোবাইল শাসন! হেডস্যরের ঘর থেকে স্কুলের নোটিস বোর্ড, অভিভাবকদের তলব থেকে কানমলা— কাজে আসেনি কিছুই। বাধ্য হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, খুব দরকারে না হয় নিতান্ত একটা ‘আন-স্মার্ট’ দিন, কিন্তু ঝকঝকে অ্যানড্রয়েড কখনোই নয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। কাঁটা লেগেই আছে!
ধরা পড়লে, ‘আর হবে না স্যর’ কিংবা ‘ভুল করে ব্যাগে চলে এসেছে’ গোছের অজুহাত দিয়ে পার পেয়ে যাওয়া ছেলেদের ভয়টাই উবে গিয়েছিল। মঙ্গলবার তাই ছেলেরা স্কুলে পা দিতেই শুরু হয়েছিল ব্যাগ সার্চ। নিট ফল, ৬৮টি ঝকঝকে মোবাইল। প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতির যৌথ উদ্যোগে এমন বিপুল উদ্ধার দেখে তাঁরা নিজেরাই হতভম্ব।
প্রধান শিক্ষক উৎপল মণ্ডল বলেন, ‘‘বার বার ছাত্রদের বলেছি, নোটিশ দিয়েছি। কোনও ফল হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই এ দিন সভাপতির পরামর্শ মতোই ওই কাজ করতে হয়েছে।’’ স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি ইউনুস আলি বলছেন, “শিক্ষকেরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন ক্লাসে ক্লাসে ছাত্র ছাত্রীদের মোবাইলের দাপটে। বহু শিক্ষক ক্লাস করতে গেলে ক্লাসের মধ্যেই বেজে ওঠে ফোন। কেউ বা ক্লাসের পিছনে বসে মোবাইলে গেম খেলে। অভিযোগ পেয়ে এত দিন মোবাইল আটক করলেও পরে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
তবে, অভিভাবকদের তলব করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এর পরে ফোন পাওয়া গেলে স্কুল থেকে টিসি ধরিয়ে দেওয়া হবে।
রঘুনাথগঞ্জের স্কুলের এই ঘটনায় অবশ্য আশ্চর্য নন নিউ ফরাক্কা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রিজুয়ানুল হক। তিনি বলছেন, “২৬০০ ছাত্র ছাত্রী স্কুলে। মোবাইল নিয়ে কম ভুগতে হয়নি আমাকেও। বন্ধ কী করতে পেরেছি, তবে কমেছে। এবং তা কড়া হাতে দমন করাতেই।’’
জেলার জোতকমল হাইস্কুলে অবশ্য ছাত্র ছাত্রীদের মোবাইল নিষিদ্ধ বহু দিন। প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর সাহা বলছেন, “টিউশন নিতে গিয়েও ওই পথে স্কুলে আসে অনেকে। তারা মোবাইলটা অফিস ঘরে রেখে ক্লাসে যায়। এটাই নিয়ম। ক্লাসে ফোন নিয়ে ধরা পড়লে, সটান টিসি।’’