ভিখারির আর্জি, স্কুলে ভর্তি নাতি

প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে একটি কাতর অনুরোধ জানালেন বৃদ্ধা। তাঁর নাতিটিকে স্কুলে ভর্তি নিতে হবে। পড়ানোর সামর্থ্য নেই তাঁর। ভিক্ষে করেই সংসার চলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

বাদকুল্লা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

সকালের প্রার্থনা সবে শেষ হয়েছে। এ বার ক্লাস নিয়ে যাবেন শিক্ষকেরা। সেই মতো খাতাপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। সে সময় স্কুলের অফিসঘরে ঢুকে পড়লেন এক বৃদ্ধা। মলিন পোশাক। চোখে করুণ মিনতি। বাঁ হাতের মুঠোয় ধরা এক কচি হাত। তাঁদের দেখে থতমত সকলে। প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে একটি কাতর অনুরোধ জানালেন বৃদ্ধা। তাঁর নাতিটিকে স্কুলে ভর্তি নিতে হবে। পড়ানোর সামর্থ্য নেই তাঁর। ভিক্ষে করেই সংসার চলে।

Advertisement

বৃদ্ধার আবেদনে সাড়া মেলে। নাতিকে উচ্চ শিক্ষিত করতে বৃদ্ধার লড়াইয়ের হাত শক্ত করলেন বাদকুল্লা অঞ্জনগড় হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ। বিনা ফি-তেই তাঁর নাতি রাকেশ দাসকে ভর্তি নেওয়া হল স্কুলে।

রাকেশের বাবা ঘর ছেড়েছিলেন আগেই। তাঁর কয়েক বছর পরে বাড়ি ছেড়ে যান মা-ও। খোঁজ মেলেনি তাঁদের। তাঁরাও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। অসহায় তিন ভাই বোনের ঠাঁই হয়েছিল দাদু-দিদার কাছেই। দিদাই ভিক্ষা করে মানুষ করার চেষ্টা করছেন তাদের। দুই বোন স্কুলে পড়লেও এখন তাদের ভাইকে স্কুলে ভর্তি করতে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল টাকা। অথচ নাতিকে উচ্চশিক্ষিত করতে চান দিদিমা।

Advertisement

তাহেরপুরের বাদকুল্লার বল্লভপুরে বাড়ি জয়ন্তী সিকদারের। স্বামী গোপাল সিকদার অসুস্থ। কাজকর্ম করতে পারেন না। বুড়ো তিনিই অশক্ত হাতে হাল ধরেছেন সংসারের। কখনও ভিক্ষে করে, কখনও অন্যের বাড়িতে ঘটি-বাটি মেজে সংসার চালান। তিন নাতি-নাতনি ও বৃদ্ধ স্বামীর জন্য অন্নের বন্দোবস্ত করেন।

জয়ন্তী জানান, বছর পনেরো আগে মেয়ে শ্যামলীর বিয়ে দিয়েছিলেন বাদকুল্লার গাঙনি দাসপাড়ায়। বিয়ের পরে বেশির ভাগ সময় স্বামীকে নিয়ে মেয়ে তাঁর কাছে থাকতেন। বছর চারেক আগে স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের ফেলে বাড়ি ছাড়েন জামাই নিমাই দাস। বাড়ি ছাড়েন মেয়ে শ্যামলীও। তাঁরা আর যোগাযোগ করেননি। তিন ভাই-বোন বড় হয়ে ওঠে দাদু-দিদিমার আশ্রয়েই। তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় রত্না এখন অঞ্জনগড় হাইস্কুলেই নবম শ্রেণিতে পড়ে। একই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে তার বোন বর্ষা। রাকেশ প্রাথমিকের গণ্ডি পার করলেও টাকার অভাবে কোথাও তাকে ভর্তি করা যাচ্ছিল না। শুক্রবার তাই নাতিকে সঙ্গে নিয়ে বাদকুল্লার অঞ্জনগড় হাইস্কুলে গিয়েছিলেন জয়ন্তী। যদি শিক্ষকেরা বিনা বেতনে ভর্তি করে নেন এই আশায়।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃদ্ধার কথা শুনে বিনা বেতনে রাকেশকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হয়। শুধু রাকেশ নয় তার দুই দিদিরও বেতন মকুব করে দেওয়া হচ্ছে। জয়ন্তীদেবী বলেন, ‘‘জানি না এ ভাবে আর কতদিন নাতি-নাতনিদের পড়ার খরচ দোগাতে পারব। স্কুলে গিয়ে তাই বলেছিলাম আমার নাতিকে ভর্তির নেওয়ার কথা। বেতন দিতে পারব না জানিয়েছিলাম। তাঁরা কথা রেখেছেন।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ রকম ক্ষেত্রে আমরা অনেকেরই বেতন মকুব করে দিই। কিন্তু এ দিন বৃদ্ধার লড়াইটাই আমাদের টেনেছিল। আমরা রাকেশ এবং তাঁর দুই দিদির বেতন মকুব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন