রুটির সঙ্গে পাতে পড়ে গাওয়া ঘিয়ে রান্না বানজারি ডাল

সেহরির সেই ঐতিহ্য আজও অমলিন

রোজা ও ইদ-সহ মুর্শিদাবাদ এস্টেটের তালিকায় থাকা শিয়া সম্প্রদায়ের মোট ২৩টি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করার জন্য জন্য রয়েছে নানা ধরনের ধর্মীয় পদাধিকারী। সরকারি এস্টেটের তহবিল থেকে তাঁদের ভাতাও দেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লালবাগ শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ০২:০৮
Share:

প্রস্তুতি: ইফতারের রান্না। লালবাগ ইমামবাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

নবাবি আমলের ইফতারি ও সেহরির ট্র্যাডিশন আজও সমানে চলছে একদা বংলা-বিহার-ওড়িশার রাজধানী লালবাগ তথা মুর্শিদাবাদ শহরে।

Advertisement

নবাবের বদলে দৈনিক শ’ দুয়েক লোকের ইফতার আর সেহরির ব্যবস্থার বর্তমান দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য সরকারের আইন বিভাগের অধীনে থাকা ‘মুর্শিদাবাদ এস্টেট’। এ রাজ্যে সরকারি উদ্যোগে সেহরি ও ইফতারির এমন উদ্যোগ কেবল এখানেই রয়েছে। হাজারদুয়ারি প্যালেস ও মিউজিয়ামের মুখোমুখি অবস্থিত ঐতিহাসিক ইমামবাড়ায় নবাবি ঘরানার সেই ইফতারি ও সেহরি প্রস্তুতের আয়োজন শুরু হয় রমজান মাসের প্রতিদিন সকালে। রোজার নিরম্বু উপবাস শুরু করার আগে ভোর রাতে সেহরি খেতে হয়। তার জন্য তন্দুর বসিয়ে তৈরি হয় নাদ রুটি, বানজারি ডাল, আলুকোর্মা। মটন বিরিয়ানিও রান্না হয় ইমামবাড়ার ভিতরে। সেখানেই নানা রকম ফল, তেলেভাজা ও মুড়ি দিয়ে সাজানো হয় উপবাস ভাঙার ইফতারের থালা।

রোজা ও ইদ-সহ মুর্শিদাবাদ এস্টেটের তালিকায় থাকা শিয়া সম্প্রদায়ের মোট ২৩টি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করার জন্য জন্য রয়েছে নানা ধরনের ধর্মীয় পদাধিকারী। সরকারি এস্টেটের তহবিল থেকে তাঁদের ভাতাও দেওয়া হয়।

Advertisement

এস্টেট ম্যানেজার সৌরভ মণ্ডল বলেন, ‘‘নবাবি আমল থেকে পবিত্র রমজান মাস জুড়ে ইমামবাড়ার ধর্মীয় সুপারের তত্ত্বাবধানে সেহরি ও ইফতার বিতরণের প্রথা চলে আসছে। মুর্শিদাবাদ এস্টেটের তালিকায় থাকা বেরা ও মহরম-সহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানও একই ভাবে পালন করা হয়।’’

ইফতারি ও সেহরি বিলি নিয়ে বহুল প্রচলিত কাহিনিটি নবাব ওয়াশেফ আলি মির্জাকে ঘিরে। ব্রিটিশ শাসনকাল। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র ওয়াশেফ আলি মির্জা উপবাস করতে পারতেন না। নবাব পরিবারের বর্তমান বংশধর, তথা ইমামবাড়ার সুপার সৈয়দ জামিল মির্জা বলেন, ‘‘নবাব ওয়াশেফ আলি মির্জা উপবাস করতে না পারায় ধর্মীয় রীতি মেনে নবাবের বদলে ৬০ জনকে রোজা রাখতে হত। সেই ৬০ জন রোজদারের কাজু, কিসমিস, আখরোট, আপেল- সহ নানা ফলের এলাহি ইফতার ও বিরিয়ানির সেহরির ব্যবস্থা করতেন খোদ নবাব নিজেই।’’

এখন ষাটের বদলে রোজদার বেড়ে হয়েছে প্রায় দু’শো। ইমামবাড়ার সহকারি সুপার কামবার আলি বলেন, ‘‘তবুও চেষ্টা করা হয়, ইফতারের থালায় আপেল, কলা, নাসপাতি, ছোলার ঘুঘনি, বেগুনি ও মুড়ির জোগান বহাল রাখতে। সূর্য পাটে বসার আগে ইফতারের পসরা চলে যায় চক মসজিদে। সেখানে বসে বিশাল মজলিস।’’ ইফতারের আগের বিকালে ইমামবাড়ায় সমবেত হন লালবাগের চক, বকরি গলি, রাজাবাজার, জুবলি ট্যাঙ্ক, কুতুপুর- সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নবাব পরিবারের পাশাপাশি অন্য রোজদারেরা। সেহরির জন্য তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নাদ রুটি।

রুটির সঙ্গে কোনও দিন দেওয়া হয় পুদিনা পাতা ও গাওয়া ঘি দিয়ে রান্না বানজারি ডাল। কোনও দিন আলু কোর্মা। কোনও দিন ছোলার ডালের ডালনা। জামিল মির্জা বলেন, ‘‘নবাবি আমলে প্রতিদিন বিরিয়ানি দেওয়া হত। খাঁটি গাওয়া ঘিয়ের সেই শাহি বিরিয়ানির স্বাদই আলাদা। তার বেহশতি খুশবুতে চারপাশ ম ম করত! মুর্শিদাবাদ এস্টেটের আর্থিক সামর্থ্য আর আগের মতো নেই। তবু ঐতিহ্য রক্ষা করতে রোজার মাসে সেহরির জন্য ২৮ দিন ডাল-রুটি-আলু কোর্মা দেওয়া হলেও ২ দিন মটন বিরিয়ানি দেওয়া
হয় আজও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন