জিএসটি-র ধাক্কায় কাত তাঁতের শাড়ি

গত বছরের শেষে নোট বাতিলের ধাক্কায় এক বার বেসামাল হয়ে পড়েছিল তাঁতশিল্প। তা সামলে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ধাক্কা। এক দিকে হিসেব রাখার জটিল পদ্ধতি, অন্য দিকে সুতো-সহ প্রায় সব সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:০৭
Share:

দুয়ারে পুজো। এই সময়ে শান্তিপুর ঘুমোয় না। ফি বারই এই সময়ে মধ্যরাতের তাঁত কাপড়ের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার হইচইয়ে গমগম করে শান্তিপুর শহর। কিন্তু জিএসটির ধাক্কায় সব বেমালুম উধাও। তাঁতের কাপড়ে কর বসায় ঝিমিয়েছে বাজার। তাঁতিরা অভাবী বিক্রি করছেন।

Advertisement

গত বছরের শেষে নোট বাতিলের ধাক্কায় এক বার বেসামাল হয়ে পড়েছিল তাঁতশিল্প। তা সামলে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ধাক্কা। এক দিকে হিসেব রাখার জটিল পদ্ধতি, অন্য দিকে সুতো-সহ প্রায় সব সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। সাঁড়াশি চাপে নাভিশ্বাস তাঁতি ও বস্ত্র ব্যবসায়ীদের।

নদিয়ার শান্তিপুর ও ফুলিয়ায় ছোট ব্যবসায়ীর সংখ্যাই বেশি— প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার। যাঁদের বেশির ভাগই নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত। ফলে জিএসটি নম্বর নিলে কম্পিউটার নয় শুধু, তাতে হিসেব রাখার কর্মীও রাখতে হবে। মাসে আট থেকে দশ হাজার টাকা বেতন দিয়ে লোক রাখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। সেই কারণে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী জানিয়ে দিয়েছেন, জিএসটি নম্বর নেবেন না।

Advertisement

আর তাতেই তৈরি হয়েছে সঙ্কট। এত দিন অন্য রাজ্য বা জেলা থেকে আসা ছোট-বড় খদ্দের হাট থেকে নগদে কাপড় কিনতেন। কিন্তু তাঁরা জিএসটি নম্বর ছাড়া কাপড় কিনতে পারছেন না। কেননা তাতে পরিবহণে কাপড় নিয়েও যাওয়াও যাচ্ছে না! ফলে স্থানীয় তাঁতি বা ব্যবসায়ী হাটে এলেও বড় খদ্দেররা অনেকেই কাপড় না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।

মুর্শিদাবাদি সিল্কের ক্ষেত্রেও শেষ দু’টি ধাপে ৫ শতাংশ জিএসটি বলবৎ হয়েছে। কিন্তু সেই স্তরে আগে ভ্যাট ছিল। ফলে ফারাক তেমন কিছু হয়নি। সেন্ট্রাল সেরিকালচার রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর কণিকা ত্রিবেদী বলেন, ‘‘রেশম শিল্পে অনেক ধাপ আছে। প্রথম দিকের ধাপগুলোয় কোনও জিএসটি নেই। ফলে তেমন ভাবে ধাক্কা না লাগারই কথা।’’ কিন্তু বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা এখনও জিএসটি নম্বর নেননি বা পাননি। ফলে তাঁদের কাপড় বিক্রি করতে পারছেন না বড় ব্যবসায়ীরা। তার ফলে উভয়ের ব্যবসাই মার খাচ্ছে।

তাঁতের দশা অনেক বেশি খারাপ। এক সময়ে এ রকম কিছু হাটে দিনে কোটি টাকার ব্যবসা হত। এখন তাঁতি কাপড় নিয়ে এলেও বিক্রি হচ্ছে না। ফুলিয়ার ছোট ব্যবসায়ী সহদেব ঘোষ বলছেন, “বাধ্য হয়ে মহাজনের কাছে কাপড় বিক্রি করছি। দরদামের সুযোগ নেই। যা দাম দেবে, সেটাই মেনে নিতে হবে।” জিএসটির ফলে শুধু সুতোর দামই ৫ থেকে ১৮ শতাংশ বেড়েছে। ফুলিয়ার বস্ত্র ব্যবসায়ী অভিনব বসাক বলেন, “বিক্রির সময়ে কিন্তু বেশি দাম মিলছে না। বরং সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে কম দামে কাপড় কিনতে চাইছে মহাজনেরা। ব্যবসায়ীরা দু’দিক থেকে মার খাচ্ছেন।” হস্ততাঁত শিল্প উন্নয়ন আধিকারিক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “তাঁতের টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।” শান্তিপুর তাঁতবস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতি সম্পাদক তারক দাস বলেছেন, “ব্যবসায়ীদের বলেছিলাম যাতে তাঁরা জিএসটি নম্বর নেন। কিন্তু মাসে অত টাকা বেতন দিয়ে কর্মী রাখার ক্ষমতা সত্যিই ওঁদের নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন