জামদানিতে ধরা পড়ল ভূত। নিজস্ব চিত্র
‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ সিনেমার সেই বাঁশবনের কথা মনে আছে? যেখানে ভূতের রাজার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল গুপী-বাঘার?
শান্তিপুরের বাগআঁচড়ার বাঁশঝাড়টার সঙ্গে কোথায় যেন একটা মিল আছে সেই বাঁশবনের।
ভরদুপুরে বাঁশ ঝাড়টার কাছে গেলে খটাখট শব্দ পাওয়া যায়। আর একটু এগোলে দেখা যাবে ইটের গাঁথনির ছোট্ট ঘরে মাটির মেঝেয় খটখটি তাঁতে রেশমের জমিনে ফুটে উঠছে হাজার ভূতের রাজার ছবি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সত্যজিৎ রায়ের অমরসৃষ্টি ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ সিনেমার এই বছর পঞ্চাশ বছর। শান্তিপুরের গৃহবধূ মাণ্ডবীচক্রবর্তী ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর গল্প শাড়িতে বোনার কথা ভেবেছেন। রানাঘাটের মেয়ে মাণ্ডবী ছোটবেলা থেকেই আঁকতে ভালবাসেন। শান্তিপুরে বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই তাঁতের খটাখট শব্দকে ভালবেসে ফেলেছিলেন। ভেবেছিলেন আঁকা আর তাঁতকে একসঙ্গে মেলাতে হবে। হিন্দিতে গুপী-বাঘার কার্টুন সিনেমাও তৈরি হয়েছে মূল সিনেমাটির পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে। তিনিও সিনেমাটি নিয়ে একটা কিছু করবেন ভাবছিলেন, এমন সময়ে কাশ্মীরের জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি পরোক্ষে আঘাত করে মাণ্ডবিকে। তাঁর কথায়, ‘‘সব সময়ে মনে হচ্ছিল, যুদ্ধ কোনও সমাধান নয়। যুদ্ধ নয় শান্তি চাই।’’ আর সেই বার্তা দিতেই অবলম্বন হয়ে ওঠেন প্রিয় সত্যজিৎ।
‘‘পনেরোটি হাতে আঁকা ছবির মাধ্যমে তৈরি করি পুরো গুপী-বাঘার গল্প। বাগআঁচড়ার তাঁত শিল্পী দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস সেই ছবিগুলো বুনে দিতে রাজি হন তাঁর তাঁতে। পুরো গল্পটা শাড়ির পাড়ে আঁকা হচ্ছে। গল্পের শুরুতে আছে আমলকি গ্রামের কথা আর শেষে আছে হাল্লার সেনারা যুদ্ধ করতে চাইছেন না। শাড়ির সারা গায়ে থাকছে ভূতের মুখ, হাঁড়ি ভরা মিষ্টি, রাজ মুকুট আর গুপী-বাঘার জুতোর ছবি।’’
তিনি জানালেন, আঁচলে ফুটে উঠবে যুদ্ধবিরোধী বার্তায় সেই ছবির গানের লাইন— ‘‘মিথ্যে অস্ত্র শস্ত্র ধরে, প্রাণটা কেন যায় বেঘোরে, রাজ্যে রাজ্যে পরস্পরে দ্বন্ধে অমঙ্গল, তোরা যুদ্ধ করে করবি কি তা বল?’’
চৈত্রের দুপুরে শাড়ির পাড়ে বুটি তুলতে তুলতে দেবেন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘এ কাজ খুব কষ্টের, চোখের উপরে চাপ পড়ে খুব। এই ধরনের একটা শাড়ি শেষ করতে এক মাসেরও বেশি সময় লাগে। পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিক মেলে না।’’ তবে জানাতে ভোলেননি, কাজের শেষে যখন একটা নতুন কিছু সৃষ্টি হয় তখন না-পাওয়ার কষ্টগুলো ভুলে যান সৃষ্টির আনন্দে।
গুপী-বাঘার গল্প তাঁতে তৈরির ঘটনাকে সাধুবাদ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত তাঁতশিল্পী বীরেন বসাক। তিনি বলেন, ‘‘চলচ্চিত্রের গল্প এই তাঁতে ফুটে উঠছে শুনে শিল্পী হিসাবে গর্ববোধ করছি। ওঁদের পাশে আছি সবসময়ে। ওঁরা ‘যুদ্ধ নয় শান্তি চাই’ যে বার্তা এই শাড়িতে দিয়েছে, সে ভাবনা চমৎকার। তবে আমরা কিন্তু যুদ্ধ করছি। যুদ্ধ করছি পাওয়ার লুমের সঙ্গে। সেই যুদ্ধে মাণ্ডবি, দেবেন্দ্রনাথেরা আমার সহযোদ্ধা। বাংলার এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই করব আমরা।’’ তিনি জানান, তাঁর একটি মিউজিয়াম গড়ার ভাবনা রয়েছে তাঁতের এই মহার্ঘ শাড়িগুলি সংরক্ষণের জন্য।