কঙ্কালঘর দেখাচ্ছেন পাড়ার ‘গাইড’রা

দেওয়াল থেকে খসে পড়ছে চুন। বেরিয়ে এসেছে ইঁটের হাড়-পাঁজরা। টালির চালটা বারান্দার উপর একহাত ঝুলে পড়েছে। তাতে লতিয়ে উঠছে জঙ্গলি গাছপালা। দিনের বেলাতেও যেন গা ছমছমে অন্ধকার।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

হরিণঘাটা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৮
Share:

কৌতূহলি জনতার উঁকিঝুকি। —নিজস্ব চিত্র।

দেওয়াল থেকে খসে পড়ছে চুন। বেরিয়ে এসেছে ইঁটের হাড়-পাঁজরা। টালির চালটা বারান্দার উপর একহাত ঝুলে পড়েছে। তাতে লতিয়ে উঠছে জঙ্গলি গাছপালা। দিনের বেলাতেও যেন গা ছমছমে অন্ধকার।

Advertisement

‘‘...এই বাড়িটাই না? ভিড় দেখে তো মনে হচ্ছে তাই’’ —বললেন মাঝবয়সি ব্যক্তি। সেই চাকদহ থেকে তিনি শ্রীমাঠে এসেছেন স্রেফ কঙ্কালের বাড়ি দেখতে।

শুধু তিনি-ই নন। এমন উৎসাহীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। রবিবার মুখে মুখেই রটে গিয়েছিল খবরটা। তাতে বাড়তি ইন্ধন জুগিয়েছে সংবাদপত্র। এ বাড়িরই দুই ছেলে অরুণ ও অজিত সাহা তাঁদের মায়ের মৃতদেহ আট মাস আগলে রেখেছিল। সোমবার সকাল থেকেই তাই সাহা-বাড়ির সামনে ভিড় জমে গিয়েছে। কেউ এসেছেন চাকদহ থেকে, তো কেউ কাচরাপাড়া থেকে। পুলিশ দু’টি ঘরেই তালা মেরে দিয়েছে। কিন্তু তাতে কী! অনেকেই ঘরের হা করে খোলা জানালাটার গরাদের ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে যাচ্ছেন, কোন তক্তপোষে রাখা ছিল কঙ্কাল, ঘরের ভিতরটাই বা কেমন। ইতিমধ্যেই পাড়ার জনা কয়েক যুবক রীতিমতো গাইডের ভূমিকায় নেমে পড়েছেন। ‘এ দিকে দাদা, এ দিকটায়...’, ডেকে দেখাচ্ছেন তাঁরাই।

Advertisement

এ বাড়ির জীবিত দুই বাসিন্দা অরুণ ও অজিত সাহার ঠিকানা আপাতত হরিণঘাটা থানার মোহনপুর পুলিশ ফাঁড়ি। বারবার নানা ভাবে প্রশ্ন করা হচ্ছে দুই ভাইকে। কিন্তু নতুন করে কিছু জানা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের রোষের মুখে পড়ে ভয়ে কুঁকড়ে ছিলেন দু’জনে। পুলিশের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে তাঁরা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছেন।

পুলিশ জেনেছে, দীর্ঘদিন এক রকম না খেয়েই ছিলেন দুই ভাই। খাবার বলতে শুধু মুড়ি আর চানাচুর। তা-ও এক বেলা। কখনও কখনও সেটাও জুটত না। ঘরে অনেকগুলো ফয়েল বাক্স মিলেছে। অজিতবাবু জানিয়েছেন, সেগুলিতে করে তিনি বাজার থেকে ঘুগনি নিয়ে যেতেন। ব্যাপারটা যে একেবারেই মিথ্যা গল্প নয়, মনে করছে পুলিশও। কারণ, দীর্ঘদিন আধপেটা খেয়ে থাকার ছাপ স্পষ্ট তাঁদের শরীরে। আর সেই জন্য তাঁরা বারবার খাবার চাইছেন। রবিবার দুপুরে মাছ-ভাতের পর রাতে তাঁদের রুটি-তরকারি দেওয়া হয়। প্রথমে দু’জনকেই চারটে করে রুটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা চেয়ে আরও তিনটি করে রুটি খান। সোমবার দুপুরে মাংস-ভাত খাওয়ানো হয়। পুলিশ নতুন জামাকাপড়ও কিনে দিয়েছে।

রবিবার রাতে স্থানীয় বাসিন্দা দীপক গিরি একটি জেনারেল ডায়েরি করেছেন। তাতে অবশ্য দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। সোমবার ননীবালা দেবীর কঙ্কাল কল্যাণীর জেএনএমে ময়নাতদন্তের পর সৎকার করা হয়। অরুণবাবু মুখাগ্নি করেন। হাসপাতালের তরফে কিছু নমুনা ফরেন্সিক তদন্তের জন্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন