গতি কমিয়ে টোটোতেই চলছে অবাধ পাচার

ভরা বর্ষায় এ কেমন হেঁয়ালি? খেই ধরে সীমান্তের সেই প্রৌঢ়, ‘‘দেখুন কর্তা, পাঁচ কান করবেন না। বর্ষায় কাশির সিরাপ ও-পারে যায় ডুবে ডুবে। আর অন্য সময় পদ্মায় তো তেমন জল থাকে না। তখন বাধ্য হয়েই মেঠো পথ ধরতে হয়। তাতেও কি সবসময় রক্ষা আছে?’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

ডোমকল ও করিমপুর শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ১৫:০০
Share:

আটক: থানায় বাজেয়াপ্ত টোটো। নিজস্ব চিত্র

গাড়ি চলে গড়গড়িয়ে, নৌকা ভেসে ভেসে। কিন্তু কাশির সিরাপ?

Advertisement

খুকখুক করে হাসছে সীমান্তের এক পাচারকারী, ‘‘ওই যখন যেমন, তখন তেমন! এখন যেমন টোটো কোম্পানি!’’

ভরা বর্ষায় এ কেমন হেঁয়ালি?

Advertisement

খেই ধরে সীমান্তের সেই প্রৌঢ়, ‘‘দেখুন কর্তা, পাঁচ কান করবেন না। বর্ষায় কাশির সিরাপ ও-পারে যায় ডুবে ডুবে। আর অন্য সময় পদ্মায় তো তেমন জল থাকে না। তখন বাধ্য হয়েই মেঠো পথ ধরতে হয়। তাতেও কি সবসময় রক্ষা আছে?’’

কথাটা মিথ্যে নয়। রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে গাড়ি ছুটবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পুলিশ কিংবা বিএসএফের চোখে আর কাঁহাতক ধুলো দিয়ে পার পাওয়া যায়। অতএব, ধরা পড়ে সটান শ্রীঘর! কিন্তু ধরা পড়ার আগে?

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘সে আর বলবেন না! হতচ্ছাড়ারা এই মস্তিষ্ক পাচারের কাজে খরচ না করে অন্য কিছু করলে আরও উন্নতি করতে পারত। আমরাও শান্তিতে থাকতাম!’’ তিনি জানাচ্ছেন, সীমান্তের রাস্তা দিয়ে আর পাঁচটা গাড়ির সঙ্গে ছুটছে ‘প্রেস’ কিংবা ‘পুলিশ’ স্টিকার সাঁটানো গাড়ি। কখনও আবার দুধসাদা অ্যাম্বাসাডার। ওই গাড়িতে যে গাঁজা কিংবা কাশির সিরাপ যেতে পারে সেটা প্রথমে কারও মাথাতেই আসেনি।

ওই কর্তা বলছেন, ‘‘শুধু সন্দেহের বশে তো আর তল্লাশি করা যায় না। কিছু না পেলে তখন আবার উল্টো কেস! পরে অবশ্য একদিন পাক্কা খবর আসতেই আর দেরি করিনি। গাড়ি আটকাতেই পাখি পালাল। কিন্তু উদ্ধার হল কয়েক হাজার কাশির সিরাপ।’’

গত কয়েক বছর ধরে করিমপুর, হোগলবেড়িয়া, জলঙ্গি, রানিনগর, ডোমকল থানা এলাকায় এমন একাধিক গাঁজা কিংবা কাশির সিরাপ বোঝাই গাড়ি ধরা পড়ার পরে ফের ‘প্ল্যান’ বদলেছে পাচারকারীরা। এখন তাই কিছুটা ‘ধীরে চলো’ নীতি।

অর্থাৎ গতিওয়ালা গাড়িতে এখন ভরসা নেই। ডাক পড়েছে টোটোওয়ালার! সেই টোটোর আসনের উপরে বসছেন যাত্রীরা। আর নীচে দিব্যি দোল খেতে খেতে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে কাশির সিরাপ। নৌকার নীচে জাল দিয়ে কায়দা করে বাঁধা হচ্ছে সেই সিরাপের বোতল। তারপর ডুবে ডুবে জল খেতে খেতে দিব্যি চলে যাচ্ছে ওপারে।

কিন্তু সম্প্রতি সেই টোটো-যাত্রাতেও নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি ইসলামপুরের রাস্তা দিয়ে আম নিয়ে ছুটছিল একটা টোটো। এ দিকে খবর আছে—‘ডিল (পড়ুন, কাশির সিরাপ) যাচ্ছে।’ টোটো দাঁড় করিয়ে তল্লাশি করে সিভিক ভলান্টিয়ার জানালেন, ‘স্যার, এ তো সবই দেখছি আমের ঝুড়ি।’’ ল্যাংড়া, হিমসাগরের গন্ধে চারপাশ ম ম করছে। পোড় খাওয়া পুলিশ কর্তা বলে চলেছেন, ‘‘ঝুড়ি সরিয়ে দেখুন কী আছে?’’

ঠিক তাই, আমের ঝুড়ি সরাতেই বেরিয়ে এল সার দিয়ে সাজানো কাশির সিরাপ। ডোমকলের এসডিপিও মাকসুদ হাসান বলেন, ‘‘টোটোতে পাচার রুখতে এখন নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’’ তাহলে আপনাদের ‘ব্যবসা’ এখন লাটে উঠেছে?

ম্লান হেসে ওই পাচারকারী বলছেন, ‘‘আমাদের এলাকায় টোটোকে কিন্তু টুকটুকও বলা হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন