লুঠ হচ্ছে মাটি, পাড় ভাঙছে নদীর

কোথাও নিঃশব্দে পাড়ে এসে দাঁড়াচ্ছে ঢাউস নৌকা। কোথাও মেঠো পথ ধরে গর্জন করতে করতে ছুটছে ট্রাক্টরের সারি। কোথাও আবার চৈত্রের মরা নদীতে নেমে পড়েছে জেসিবি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৭ ০২:১৬
Share:

দখল: ধুলো উড়িয়ে ফিরছে ট্রাক্টর। রেজিনগরে। নিজস্ব চিত্র

কোথাও নিঃশব্দে পাড়ে এসে দাঁড়াচ্ছে ঢাউস নৌকা। কোথাও মেঠো পথ ধরে গর্জন করতে করতে ছুটছে ট্রাক্টরের সারি। কোথাও আবার চৈত্রের মরা নদীতে নেমে পড়েছে জেসিবি।

Advertisement

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবাধে লুঠ হচ্ছে নদীর মাটি। এলাকার মানুষ বিরক্ত। পুলিশ-প্রশাসনও সব জানে। তার পরেও নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জুড়ে মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য ক্রমে বেড়েই চলেছে। নদী পাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের প্রশ্রয় ছাড়া প্রকাশ্যে এমন বেআইনি কারবার চলতেই পারে না। সকলেই নিজেদের লাভ বুঝতে ব্যস্ত। বর্ষায় শুধু বিপদে পড়তে হয় তাঁদেরই।

বেলডাঙা ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভাগীরথীর পাড় থেকে চলছে মাটি লুঠ। প্রায় ৬০টি ইটভাটা-সহ নানা কাজে লাগানো হচ্ছে সেই মাটি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এখনই এই মাটি কাটা না রুখলে বর্ষাতে ভেঙে পড়বে নদীর বাঁধ। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতকে জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি।

Advertisement

কৃষ্ণনগর শহরের উল্টো দিকে ধুবুলিয়ার মায়াকোলের দিকেও জলঙ্গি নদীর পাড় থেকে নিয়মিত লুঠ হচ্ছে মাটি। অভিযোগ, প্রতিদিন কাকভোরে নৌকায় সে মাটি বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একই ভাবে তেহট্টের রানিনগরেও জলঙ্গির পাড় থেকে চলছে মাটি কাটা।

নবদ্বীপে গৌরাঙ্গ সেতুর দু’পাশে, ধুবুলিয়ার রাজাপুরে, নারায়ণপুরের গোপালনগরেও ছবিটা একই রকম। নারায়ণপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রিনা খাতুন বিশ্বাস বলছেন, “প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু তার পরেও মাটি কাটা বন্ধ হয়নি।”

নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট ব্রিক ফিল্ড ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য বলছেন, “নদীর পাড় থেকে মাটি কাটা বেআইনি। যদি কোনও ভাটা মালিক সেই কাজ করেন তাহলে সে দায় একান্ত ভাবেই ওই ভাটা মালিকের।” বেলডাঙার এক ভাটা মালিক আবার বলছেন, ‘‘আমরা ট্রাক্টরওয়ালাদের কাছ থেকে মাটি কিনি। তারা কোথা থেকে মাটি আনছে সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়।’’

নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, “আমরা মাঝে মধ্যেই অভিযান চালাই। বেআইনি কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।” বহরমপুরের (সদর) মহকুমাশাসক দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

তবে আশ্বাসে ক্লান্ত নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘আরও কত বার বানের জলে ভাসলে টনক নড়বে প্রশাসনের?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন