রানিনগর সীমান্তের সেন্টু মণ্ডল রোজই যান চরের মাঠে চাষ করতে। শুক্রবার সকালে চরের মাঠ পর্যন্ত যেতে গিয়ে তাঁকে অন্তত পাঁচ বার থামিয়ে একই প্রশ্ন বারবার জিজ্ঞাসা করেছে বিএসএফের জওয়ানেরা। খেত থেকে ফেরার পথে সেন্টুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রোজই তো বাপু মাঠে যাচ্ছি। কই, এমনটা তো অন্য দিন হয় না!’’ একই চিত্র দেখা গিয়েছে নদিয়ার বেশ কিছু সীমান্তেও। কাঁটাতারের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা ইন্দো বাংলাদেশ রোডে একাধিক জায়গায় থামতে হয়েছে সাইকেল কিংবা বাইক চালকদের। উত্তর দিতে হয়েছে বিএসএফ জওয়ানদের নানা প্রশ্নের।
সীমান্ত তো বটেই, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চূড়ান্ত সতর্ক রেল ও জেলা পুলিশ। এ দিন কৃষ্ণনগর কিংবা বহরমপুরের মতো স্টেশনে রেল পুলিশের সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। কোনওরকম সন্দেহ হলেই চলেছে তল্লাশি। পনেরোয় অগস্টের আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোথাও কোনও খামতি রাখতে রাজি নয় রেল কিংবা জেলা পুলিশ কেউই।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১২ অগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে কড়া নজরদারি। চলবে ১৬ অগস্ট পর্যন্ত। প্রতিটি স্টেশনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রেল পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশও নজর রাখছে স্টেশন চত্বরে। বাইরে থেকে কেউ ঢুকে যাতে জেলায় ঢুকে নাশকতা মূলক কোনও কাজ না করতে পারে তার জন্য জেলার প্রত্যেকটি প্রবেশপথে চলছে নজরদারি। নজর রাখা হয়েছে জাতীয় সড়ক ও অন্যান্য রাজ্য সড়কেও।
শুক্রবার নদিয়ার করিমপুরে যাত্রীবোঝাই বাস থেকে আটটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। হোগলবেড়িয়া সীমান্তের রাজাপুর থেকে ওই বাসটি কৃষ্ণনগরে যাচ্ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ নাটনা মোড়ের কাছে বাসটি থামিয়ে তল্লাশি শুরু করে। সিটের তলা থেকে একটি ব্যাগে ওই আগ্নেয়াস্ত্রগুলি মেলে।
জেলা পুলিশের দাবি, রাস্তায় তল্লাশির পাশাপাশি জেলার হোটেল ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশের ধাবাগুলির উপরেও কড়া নজরদারি চলছে। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) অজয় রানাডে। জেলা পুলিশ ও বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সীমান্তে বিএসএফের টহলদারি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জেলার বেশ কিছু এলাকায় পুলিশ ও বিএসএফ যৌথ ভাবেও টহল দিচ্ছে। নদিয়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তেও নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে বিএসএফের সঙ্গেও কথা হয়েছে।’’
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘জেলার সীমান্ত-সহ সব এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’’ মুর্শিদাবাদের জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘এ বারের স্বাধীনতা দিবস আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। জেলার বহু এলাকা বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া। অনেক জায়গাতেই কাঁটাতারের বেড়া নেই। ফলে সতর্ক করা হয়েছে সীমান্তঘেঁষা থানাগুলোকেও।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জেলাশাসক থেকে শুরু করে মহকুমাশাসক, বিডিও-সহ সকলেই নিজেদের দফতরের সামনের এলাকা সাফাই করবেন। নাশকতা রুখে দেওয়া ছাড়াও এলাকাকে এ দিন জঞ্জালমুক্ত করাটাও প্রশাসনের কাছে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।