মুর্শিদাবাদে ১৩ ওসি বদল, কারণ নিয়ে জল্পনা

পুলিশ সুপার ‘জনস্বার্থে’ বললেও, বিরোধীরা কিন্তু এটাকে ‘শাসক স্বার্থের বদলি’ বলে আঙুল তুলেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৯
Share:

বিরোধীরা এই বদলিকে ‘শাসক স্বার্থের বদলি’ বলে আঙুল তুলেছেন। প্রতীকী ছবি।

মুর্শিদাবাদ জেলার ২৭টি থানার ১৩টি’র ওসি বদলি হল শুক্রবার। বদলির নির্দেশিকায় পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার স্পষ্টই লিখেছেন লিখেছেন— ‘‘জনস্বার্থে বদলি করা হল। নতুন থানায় শনিবার যোগ দিতে হবে। বদলির বিষয়ে কোনও আর্জি জানানো যাবে না।’’

Advertisement

পুলিশ সুপার ‘জনস্বার্থে’ বললেও, বিরোধীরা কিন্তু এটাকে ‘শাসক স্বার্থের বদলি’ বলে আঙুল তুলেছেন। এমনকি, জেলা পুলিশের একটি অংশ এই বদিলর সঙ্গে আসন্ন লোকসভার ছায়াও দেখছেন।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুব্রত সাহা অবশ্য এর মধ্যে কোনও রাজনীতির রং দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘‘এটা রুটিন বদলি বলেই শুনেছি। অনেক ওসি একই থানায় প্রায় তিন বছর কাটিয়েছেন। তাঁদের বদলি করার দরকার ছিল। এই বদলির সঙ্গে শাসকদল ও লোকসভা ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ প্রায় একই সুরে পুলিশ সুপারও বলছেন, ‘‘এটা স্রেফ রুটিন বদলি।’’ তিনি জানান, এর পরে থানার সাব-ইন্সপেক্টরদের বদলি করা হবে।

Advertisement

তবে কংগ্রেসের দাবি এর পিছনে দলীয়স্বার্থও রয়েছে শাসক দলের। তৃমূলের অন্দরের খবর, জলঙ্গিতে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল মাথা চাড়া দিয়েছে। সেখানে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে এক তৃণমূল কর্মী সম্প্রতি খুনও হয়েছেন। দু’টি গোষ্ঠী পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মিছিলও করেছে। সে জন্যে লালগোলার কোন্দল ‘সামাল’ দেওয়া বিপ্লব কর্মকারকে জলঙ্গির ওসি করা হয়েছে। আবার বেলডাঙার একটি অংশে বিজেপি-র প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। তাই সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাগরদিঘিতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা মহম্মদ জামালউদ্দিন মণ্ডলকে। অন্য দিকে জলঙ্গির ওসি দেবাশিস সরকারের ইন্সপেক্টরের প্রমোশন পেয়ে বিধাননগর কমিশনারেটে পুজোর আগেই বদলির নির্দেশ এসেছে। সুতির ওসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ ইন্সপেক্টরের প্রমোশন পেয়ে আগেই সিআই ডিতে বদলির নির্দেশ এসেছে। ওই দুই ওসি জেলার বাইরে বদলি হওয়ায় দুজন নতুন সাব ইন্সপেক্টর ওসি হয়েছেন।

তবে, বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী মনে করছেন, ‘‘মা-মাটি-মানুষের জামানায় পুলিশ কর্তাদের প্রায় সবাই তৃণমূলের ক্যাডার হয়ে গিয়েছেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় এ জেলার পুলিশ সুপারের আচরণেই তা প্রমাণিত। ওসিদের বদলি তাই জনস্বার্থে নয়, শাসকদলের স্বার্থে।’’ বামেরাও মনে করছেন, জেলা ছাড়ার আগে আসন্ন লোকসভা ভোটে শাসকদলের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে পুলিশ সপার নিজের নম্বর বাড়াতে চাইছেন, তাই শাসক দলের স্বার্থ দেখে তিনি ঘুঁটি সাজালেন।

পুলিশ সুপার ‘রুটিন’ বদলির কথা বললেও প্রশ্ন উঠেছে বছর না ঘোরার আগেই কয়েক জন ওসি’র বদলি নিয়ে। ‘বিতর্কিত’ সাব-ইন্সপেক্টর মৃণাল সিংহ ভরতপুর থানার ওসি হিসাবে কাজে যোগ দেন ৮ মাস আগে। নিজের উদ্যোগেই হানাবাড়ির মতো দেখতে থানাটি ‘কর্পোরেট লুক’ পেয়ে যায়।

থানা লাগোয়া পুকুর সংস্কার, রাতে থাকার জন্য থানায় রেস্টরুম তৈরি থেকে দুঃস্থ শিশুদের খাওয়া-পড়ার ব্যবস্থা— এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। পুলিশ কর্মীদের ভুঁড়ি কমানোর জন্য জিমখানা গড়ে তোলেন তিনি। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজনীতির দালালদের থানায় ঢুকে হম্বিতম্বি বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। তাই কোপ পড়ল ওঁর ওপরে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন