বনভোজনের শখ মিটল জয়াবতী, রেজাউলদের

বনভোজন শব্দটা তিনি যে কত বার শুনেছেন তার ইয়ত্তা নেই। চেনা লোকজনদের নিয়ে জমিয়ে একটা বনভোজন করার ইচ্ছেও তাঁর বহু দিনের।

Advertisement

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৭
Share:

মতিঝিলে বনভোজন।

বনভোজন শব্দটা তিনি যে কত বার শুনেছেন তার ইয়ত্তা নেই। চেনা লোকজনদের নিয়ে জমিয়ে একটা বনভোজন করার ইচ্ছেও তাঁর বহু দিনের। কিন্তু ওই পর্যন্তই! সাধ হলেও সাধ্যে কুলোয়নি কোনওদিন। আর গাকুন্দা গ্রামের সত্তর ছুঁইছুঁই রেজাউল শেখের তাই বনভোজনের স্বাদও কখনও চেখে দেখা হয়নি। সেই ইচ্ছে পূরণ হল জীবনের উপান্তে এসে।

Advertisement

১২ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার মতিঝিল পার্কে রীতিমতো হইহই কাণ্ড। কারণ, এ দিন বনভোজন ছিল রেজাউলের। তাঁর মতো আরও চারশো জনের। দিনভর এ দিক ওদিক ঘুরে, বাউলশিল্পীদের গান শুনে মনের আনন্দে ওঁরা বছরের এই একটা দিন অন্য ভাবে কাটালেন। পড়ন্ত বিকেলে হাসছেন রেজাউল, ‘‘ও কর্তা, এ তো বনভোজনের থেকেও বেশি কিছু গো। যাক, মরার আগে অন্তত এই ইচ্ছেটা তো পূরণ হল।’’

ওই বৃদ্ধের মতো লালগোলার মনোয়ারা বেওয়া, শক্তিপুরের কাবেরি বৈরাগ্য, বিকলনগরের জয়াবতী বৈরাগ্যদের মতো এ দিনের বনভোজনে ওঁরা প্রায় ৪০০ জন যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা সবাই ভিক্ষাজীবী। আর ছিলেন জনা পঞ্চাশেক বাউল-ফকির। ওঁদের সবাইকে নিয়ে প্রতি বছর ১২ জানুয়ারি বনভোজনের আয়োজন করেন বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকার ফুটপাথের মোমো দোকানের মালিক নিতাই ভৌমিক।

Advertisement

ছোলা সেদ্ধ, মুড়ি, ঘুঘনি ও চা দিয়ে প্রাতঃরাশ। দুপুরে সাদা ভাত, আলুর দম, মুগের ডাল, কষা চিকেন, পাপড় ভাজা, চাটনি, রসগোল্লা ও ছানাবড়া। যাঁরা আমিষ খান না তাঁদের জন্য চিঁড়ে, দই, রসগোল্লা, ছানাবড়া ও কলার ফলাহার। নিতাই ভৌমিক জানান, বছর ছয়েক আগে এক শীত-সকালে তিনি মাংস কিনতে বাজারে এসেছিলেন। ঠিক সেই সময় একটা পিকনিকের দল মাইক বাজিয়ে পিকনিকের মাঠে যাচ্ছিল। তা দেখে দু’জন ভিক্ষাজীবীর আফশোস ছিল, ‘‘ইশ, আমরাও যদি একদিন এমন পিকনিক করতে পারতাম!’’ নিতাইবাবু বলছেন, ‘‘ওই কথাটা শোনার পর আর অন্য কিছু ভাবিনি।’’

গত ৬ বছর থেকে স্থানীয় কেবল চ্যানেলে বিবেকানন্দের জন্মদিনে আয়োজিত পিকনিকে থাকার জন্য ভিক্ষাজীবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। পাশাপাশি জনে জনে নিমন্ত্রণও করা হয়। নিতাইবাবু বলছেন, ‘‘এখন আমি আর একা নই, পাশে পেয়েছি স্ত্রী শম্পাদেবী ও জজকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান করণিক অনিল রায়, উত্তম সরকার ও নানুদার মতো বেশ কয়েক জনকে। বিশ্বাস করুন, আনন্দটা সবার মধ্যে ভাগ করে নেওয়াতেও যে কী আনন্দ তা এখন বুঝতে পারছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement