বোমা-গুলির লড়াইয়ে বিদ্ধ ছাত্র

কান্দির বেনীপুর গ্রামে বোমা-গুলির লড়াই নতুন নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কান্দি ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৫২
Share:

হাসপাতালে ওসমান। নিজস্ব চিত্র

বাড়ির সামনেই বোমা ফেটেছিল। শব্দ কিসের, মহরমের জের চলছে ভেবে দরজা খুলে বেরোতেই একাদশ শ্রেণির ছাত্রটি দেখেছিল গ্রামের পরিচিত যুবক রিপন বোমা ছুড়তে ছুৃড়তে বীর দর্পে এগোচ্ছে। তাকে ধরতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। রিপনের গুলিতে এ ফোঁড় ও ফোঁড় হাঁটু নিয়ে ওসমান শেখ এখন কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি।

Advertisement

কান্দির বেনীপুর গ্রামে বোমা-গুলির লড়াই নতুন নয়। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সমর্থকেরা পরস্পরকে ‘সবক শেখাতে’ গ্রাম জুড়ে এমন ‘সন্ত্রাস’ যে প্রায়ই ছড়িয়ে রাখে বেনীপুরের তা চেনা হয়ে গিয়েছে। এ দিন তারই শিকার হয়েছে ওই ছাত্র।

স্থানীয় বাসিন্দারা জখম ওসমানকে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতালের শয্যায় ওসমান বলে, “বাবাকে আগেই বলেছিলাম বাড়ির কাছে বোমা ফাটিয়ে আমাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। বাবা তেমন আমল দেননি।’’ পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে ওসমানের বাবা খানবাহাদুর শেখ কংগ্রেস সমর্থক। কান্দি বিধানসভার উপ-নির্বাচনে বেনীপুর বুথের কংগ্রেসের এজেন্টও ছিলেন। নির্বাচনের পর থেকেই গ্রামে বোমা-গুলির লড়াই গত কয়েক মাসে অত্যন্ত পরিচিত ঘটনা হয়ে গিয়েছে। সেই চেনা বারুদের সহজলভ্যতা নিয়েই এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

Advertisement

ভোটের উত্তাপ মিইয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও মুর্শিদাবাদে বেআইনি অস্তেরের রমরমা ক্রমেই কপালে ভাঁজ ফেলছে পুলিশের। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘একটা সময় পাচারের কাজে বেআইনি অস্ত্র ব্যবহার হত। কিন্তু কান্দির মতো এলাকায়, এমন বহুল অস্ত্র এল কোথা থেকে সে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। তা হলে কি আমাদের নজরদারিতেই কোথাও ফাঁক থেকে যাচ্ছে!’’

সন্দেহটা যে অমূলক নয়, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি সে কথাই বলছে। লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় ডোমকল থেকে বহরমপুর, নওদা, হরিহরপাড়া, কান্দি সর্বত্রই খুন-জখমের ঘটনা পুরনো মুর্শিদাবাদের কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে।

চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি বহরমপুরের নিয়াল্লিশপাড়ায় যুব তৃণমূল নেতা গুলিতে খুন হন। ১৮ মার্চ ডোমকলের কুচিয়ামোড়ায় খুন হন পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন। ৩ জুন নওদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামীর মৃত্যুর ঘটনাও গুলিতে। সেই উত্তাপ থিতিয়ে য়াওয়ার আগেই ১৫ জুন, ডোমকলের কুচিয়ামোড়ায় বোমার ঘায়ে তিন জন তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়। ১২জুলাই হরিহরপাড়ার হুমাইপুর পঞ্চায়েতের তৃমমূলের পর্যবেক্ষক সফিউল হাসান গুলিতে ছিন্ন বিন্ন করে খুন করা হয়।, ৫অগস্ট কান্দির গোসাইডোব গ্রামে কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের মৃত্যুও গুলিতে। তালিকায় শেষ সংযোজন ছিলেন নওদার বালি-১ অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি নিমাই মণ্ডল। তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে খুন করা হয়। সে ঘটনা ৯ সেপ্টেম্বরের। দিশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রের এমন যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে পুলিশও কিঞ্চিৎ অস্বস্তিতে।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘মুঙ্গের থেকে পাকুড় হয়ে আসা যে অস্ত্র সোমবার উদ্ধার হয়েছে, সেগুলি কোথায় যেত তা এখনও পরিষ্কার নয়। কেন অস্ত্র আসছিল, কোথায় যাচ্ছিল সেটাই এখন প্রধান প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও বলছেন, ‘‘এত অস্ত্র এল কোথা থেকে ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন