হাসপাতালে শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র
ক্লাসের মধ্যে দুষ্টুমি করায় নবম শ্রেণির ছাত্রকে বকুনি দিয়ে চড় মেরেছিলেন শিক্ষক। অভিযোগ, তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে উদয় সাহা নামে ওই ছাত্রের বাবা সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে স্কুলে গিয়ে চড়াও হন স্যরের উপরে। লোহার রড আর কাঠের লাঠি দিয়ে বেদম মারেন তাঁকে। আপাতত মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই শিক্ষক।
তাহেরপুর থানায় স্কুলের পক্ষ থেকে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ছাত্রের বাবা অভিযুক্ত উৎপল সাহাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে ছাত্রের পরিবারের তরফেও পাল্টা শিক্ষক প্রবীর কর্মকারের বিরুদ্ধে ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার তাহেরপুর থানার খামার শিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ঘটনাকে ‘নিন্দনীয় এবং অনভিপ্রেত’ বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ শিক্ষক ও অভিভাবক। স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের মারা এখন নিষিদ্ধ। কিন্তু কেউ যদি দুর্বিনীত হয় এবং স্কুলের মধ্যে চূড়ান্ত অভব্য আচরণ বা গোলমাল করে তখন তাকে নিয়ন্ত্রণ এবং শাসনের জন্য এক-আধটা চড় অন্যায়ের নয় বলে মত দিয়েছেন তাঁরা। কোনও কোনও অভিভাবকের তাতেও আপত্তি থাকতে পারে, তা বলে তিনি শিক্ষকের উপর হামলা চালাবেন, এমন মারবেন যে শিক্ষককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, এটাও কোনও ভাবে সমর্থনযোগ্য নয় বলে রায় দিয়েছে শিক্ষক মহলের একাংশ। শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের অবক্ষয় হিসাবে এই ঘটনাকে দেখছেন তাঁরা।
শিক্ষককে মারার ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার স্কুলে টিফিনের সময়ে খামার শিমুলিয়া এলাকায় কালো ব্যাজ পড়ে ধিক্কার মিছিল করে পড়ুয়ারা। সেখানে স্কুলের শিক্ষকেরাও ছিলেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথ বলেন, “প্রবীরবাবু নিয়মশৃঙ্খলার ব্যাপারে বরাবরই কড়া। নিয়ম ভাঙার জন্য ছাত্রটিকে শাসন করেছিলেন। ছাত্রটি কাউকে কিছু না জানিয়েই স্কুল থেকে চলে যায়। পরে শুনি, তার অভিভাবকেরা এসে প্রবীরবাবুকে মারধর করেছেন।’’ আহত শিক্ষক প্রবীর কর্মকার বলেন, ‘‘নবম শ্রেণির কিছু ছাত্র ক্লাসরুমের সামনে হুড়োহুড়ি করছিল, চিৎকার করছিল, অভব্য আচরণ করছিল। আমি তাদের বকাবকি করি এবং তাদের এক জনের পিঠে একটা চড় মারি। আমি এখনও মনে করি, শিক্ষক ও অভিভাবক হিসাবে এইটুকু শাসন করার অধিকার আমার আছে। কিন্তু এর পরেই ছেলেটির অভিভাবকেরা আমার উপর চড়াও হন।’’