ফের হরিহরপাড়ায় নাবালিকার বিয়ে রুখতে ছুটল কন্যাশ্রী যোদ্ধারা।
ক’দিন আগেই চোঁয়ায় নাবালিকার বিয়ে রুখেছিল দশম শ্রেণির ছাত্রী আশাপূর্ণা বিশ্বাস। বুধবার সে-ও ছিল যোদ্ধাদের দলে। তবে অগ্রণী ভূমিকায় দেখা গেল রুকুনপুর হাইস্কুলের ছাত্রী ফজিলা খাতুন ও তার সহপাঠীদের।
রুকুনপুর গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী শিল্পা ঘোষের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে বলে তাদের পাড়ারই একটি মেয়ের কাছে খবর পেয়েছিল দশম শ্রেণির ছাত্রী, কন্যাশ্রী যোদ্ধা ফজিলা খাতুন। শিল্পা ওই হাইস্কুলেই নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। তার পরে আর স্কুলে আসত না। তার পাড়ায় গিয়ে পাকা খবর নেওয়ার পরে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে নাবালিকা বিয়ে নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থায় যোগাযোগ করে ফজিলা। ওই সংস্থার কর্মী জাকিরুন খাতুন ও ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে সাহায্য চায়। তার পরে সোজা হাজির শিল্পার বাড়িতে।
কিন্তু, আগেই এলাকায় খবর চলে এসেছিল, কন্যাশ্রী যোদ্ধারা আসছে। ফজিলারা পৌঁছে দেখে, শিল্পাকে নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন তার মা কাকলি। অনেক ডাকাডাকির পরে মেয়েকে নিয়ে তিনি বেরিয়ে আসেন। মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন, এই খবরই তিনি প্রথমে মানতে চাননি। সকলে চাপাচাপি করতে থাকায় শেষে তিনি কবুল করেন, নওদার মধুপুরে বছর ছাব্বিশের এক দিনমজুরের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে শিল্পার। আর দশ দিন পরেই বিয়ে। কাকলির বক্তব্য, ‘‘আমার স্বামী অসুস্থ। ও আগে গোয়ালার ব্যবসা আর চাষের কাজ করত। এখন আর পারে না। ছেলেটি পণ ছাড়াই বিয়ে করতে রাজি হওয়ায় দিন করেছি।’’ তাঁর স্বামী নারায়ণ ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের অভাবের সংসার। আরও একটা মেয়ে আছে। তাই বড় মেয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত করেছিলাম।’’
ফজিলা আর তারই স্কুলের অপর্ণা হালদার, টুম্পা মাঝিরা বোঝাতে শিল্পার বাবা-মাকে বোঝাতে থাকে, কেন কম বয়সে বিয়ে মেয়ের পক্ষে ক্ষতিকর। বেআইনিও বটে। শেষমেশ কাকলি বলেন, ‘‘এতোগুলো মেয়ের কথা আমি ফেলতে পারব না। আমি কথা দিচ্ছি, সাবালক হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেব না।’’ শিল্পা বলে, ‘‘আমার ইচ্ছে, দশম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ফের পড়া শুরু করব।’’ হরিহরপাড়ার ভারপ্রাপ্ত বিডিও উদয়কুমার পালিত বলেন, ‘‘আমরা বৃহস্পতিবার শিল্পা ঘোষকে রুকুনপুর হাইস্কুলে দশম শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করব। তার পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব আমাদের।’’ ফজিলার বাবা, পেশায় দিনমজুর সামসুদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘মেয়ের কাজে আমরা গর্বিত।’’