অপেক্ষা: বসে আছেন ডায়ালিসিস করাতে আসা রোগীরা। নিজস্ব চিত্র
ভোর সাড়ে ৫টা থেকে বসে ছিলেন ডায়ালিসিস সেন্টারের সামনে। কখন খুলবে দরজা। তাড়াতাড়ি ডায়ালিসিস করিয়ে বাড়ি ফিরবেন ভেবেছিলেন বছর সত্তরের অশোক চট্টোপাধ্যায়।
দরজা খোলা তো দূরে থাক, বেলা সাড়ে এগারটা পর্যন্ত শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ডায়ালিসিস সেন্টারে দেখা মেলেনি কোনও কর্মীর। একই অবস্থা বছর পঁয়ষট্টির দিপালী দত্তর। এদের প্রায় প্রত্যেককেই সপ্তাহে দু’বার করে ডায়ালিসিস করাতে হয়। জেলা হাসপাতালের এই সেন্টারে শুধু ওষুধের জন্য ছাড়া কোনও খরচ নেই। অগত্যা হাসপাতাল কর্মীদের থেকে ঠিকানা নিয়ে পরিবারের লোক হাজির হয়েছিলেন কর্মীদের আবাসনে। অনেক অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তাতে বিশেষ বরফ গলেনি। কর্মীরা জানিয়েছিলেন যে ইউনিট ইনচার্জ তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন রাতে। তাই তাঁরা কাজ করবেন না। আর ইউনিট ইনচার্জ কোনও কথাই বলতে চাননি। এই টানাপোড়েনের ভিতরে প্রায় ১২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকল জেলা হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের ডায়ালিসিস।
ততক্ষণে তিন জন অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। তাদের এক জনকে অবশ্য ফোন করে ডেকে এনে ডায়ালিসিস করে দেন কর্মীরা। কিন্তু বাকি দু’জন আর ফেরেননি। ইউনিট ইনচার্জ হৃদয় পালের দাবি, “কর্মীরা ঠিকমতো ডিউটি করেন না বলেই আমাকে কখনও কখনও কড়া হতে হয়। সেটাই ওঁদের রাগের কারণ।” যদিও হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “এই ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যাবে না। অমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছি।” আর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপর রায় বলেছেন, “ডায়ালিসিস ইউনিটের দায়িত্বে থাকা সংস্থাকে শো-কজ করা হচ্ছে।’’
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডায়ালিসিস বিভাগ নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। বিনা নোটিসে বিভাগ বন্ধ থাকায় অক্টোবরে এক রোগীর মৃত্যুও হয়েছিল বলে অভিযোগ। তার পরেই জেলা প্রশাসন ও মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। ঠিকঠাক ডায়ালেসিস বিভাগ চালুর জন্য বেশ কয়েকটি কড়া সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। গত দু’মাসে এক বারের জন্য ডায়েলিসিস বিভাগ বন্ধ হয়নি।