দেহ ঘিরে পরিজনদের কান্না। — নিজস্ব চিত্র
দেনার পরিমান প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। সকাল-সন্ধ্যা বাড়িতে পাওনাদারদের লাইন লেগে থাকত। টাকা চেয়ে তাগিদার সঙ্গে সঙ্গে কেউ কেউ আবার হুমকিও দিতেন। ঘাড়ে বিপুল টাকা দেনা থাকায় বাড়িতেও অশান্তি লেগেই থাকত। এই সব চাপ সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন লগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালির এক এজেন্ট। শনিবার রাতে নওদার দুধসর গ্রামের বাসিন্দা অমরেশ পাল (৫৭) নিজের ঘরেই গলায় ফাঁস লাগান। পুলিশ রবিবার সকালে তাঁর দেহ উদ্ধার করে।
এলাকায় অমরেশবাবুর ভাল পরিচিতি ছিল। পাল পরিবার একদা এলাকার মুষ্টিমেয় বিত্তশালীদের মধ্যে অন্যতম ছিল। ইদানীং অবশ্য সেই পরিবারের আর্থিক হাল খানিকটা ভেঙে পড়ে। বেশ কয়েক বছর আগে অমরেশবাবু কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। রাজ্যে লগ্নি সংস্থা রোজভ্যালি ব্যবসা শুরু করলে মোটা কমিশনের নেশায় তিনি ওই সংস্থার এজেন্ট হন। এলাকার লোকজন অল্প সময়ে দ্বিগুন অর্থের লোভে তাঁদের সঞ্চিত আমানত অমরেশবাবুর কাছে জমা দেন। অল্প সময়েই অমরেশবাবুর আর্থিক হাল ফিরতে দেখে এলাকার আরও কয়েকজন যুবক রোজ ভ্যালির এজেন্টের খাতায় নাম লেখান। কিন্তু টাকা উপার্জনের এলাহি কারবার তাসের ঘরের মতো ভেঙে যেতে বেশি সময় নেয়নি। ওই লগ্নি সংস্থা এক সময় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পেরে হাত তুলে দেয়। টাকা না পেয়ে আমানতকারীরা এজেন্টদের কাছে ক্ষোভ জানাতে শুরু করে। ক্ষিপ্ত গ্রাহকরা প্রতিদিন এলাকার বড় এজেন্ট অমরেশবাবুর বাড়িতে টাকা চেয়ে ভিড় করতে থাকেন। এক সময় আমানতকারীদের তাগাদার জ্বালায় তাঁর বাড়ি ফেরা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। মৃতের স্ত্রী সীমা পাল বলেন, ‘‘পাওনাদারদের ঘন ঘন তাগাদায় উনি বেশিরভাগ দিন বাড়ির বাইরে কাটাতেন। উনি বলতেন, জমি বেচে আমনতকারীদের টাকা ফেরত দেবেন। বেশ কয়েক দিন পর বাড়ি ফিরে আসে। শনিবার কয়েকজন বাড়ি এসে ঝামেলা পাকায়। মনে হয় ওই ঝামেলা সহ্য করতে না পেরেই আত্মঘাতী হওয়ার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিলেন।’’ মৃতের ছেলে অভিজিৎ পাল জানান, বাবা বেশিরভাগ লোকের টাকা শোধ করে দিয়েছিলেন। কয়েক জনের টাকা এখনও বকেয়া ছিল। তা নিয়ে খুবই চিন্তায় ছিলেন। সে সব সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। মৃতের এক প়ড়শির দাবি, শনিবারও কয়েকজন অমরেশবাবুর বাড়িতে টাকা চেয়ে ঝামেলা পাকায়। কিন্তু টাকা দিতে পারেননি তিনি। রবিবারও দুধসর গ্রামে অমরেশবাবুর বাড়িতে লোকজন ভিড় জমান। এ দিনই আমানতকারীদের একাংশ দাবি জানান, জমিজমা বেচেও টাকা মৃতের পরিবারকে টাকা শোধ করতে হবে। অন্তত আসল টাকা ফেরত দিতেই হবে। এই ঘটনায় অবশ্য পুলিশের কাছে মৃতের পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে পুলিশ গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।