আচমকা নোটিশ, কর্মহীন ২৫০ শ্রমিক

কাঁচামাল আনার কথা ছিল শুক্রবার। দু’মাস পরে ফের পুরোদমে উৎপাদন শুরু হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু তা তো হলই না, উল্টে এ দিন ভোরে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হল কারখানার গেটে। এর ফলে নদিয়ার কল্যাণী এ ব্লকের ‘ইউআইসি উদ্যোগ লিমিটেড’ নামে তার তৈরির কারখানাটির স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো শ্রমিক কাজ হারালেন। শ্রমিকদের অসহযোগিতা এবং আর্থিক মন্দার কারণেই কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৯
Share:

কাঁচামাল আনার কথা ছিল শুক্রবার। দু’মাস পরে ফের পুরোদমে উৎপাদন শুরু হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু তা তো হলই না, উল্টে এ দিন ভোরে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হল কারখানার গেটে।

Advertisement

এর ফলে নদিয়ার কল্যাণী এ ব্লকের ‘ইউআইসি উদ্যোগ লিমিটেড’ নামে তার তৈরির কারখানাটির স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো শ্রমিক কাজ হারালেন। শ্রমিকদের অসহযোগিতা এবং আর্থিক মন্দার কারণেই কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃর্তৃপক্ষ। যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি শ্রমিকেরা। কারখানা খোলার দাবিতে এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে কারখানার কাছে কল্যাণী-ব্যারাকপুর রাস্তা অবরোধ করেন তাঁরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দিলে ঘণ্টা খানেক পরে অবরোধ ওঠে।

কারখানার জেনারেল ম্যানেজার মহেশকুমার বাজারি বলেন, ‘‘দু’মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ। আর্থিক মন্দা এবং শ্রমিদের অসহযোগিতার কারণে আমরা কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া, আমাদের কাছে আর কোনও রাস্তা ছিল না।’’

Advertisement

১৯৯৮ সালে কল্যাণী পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে কারখানাটি চালু হয়। উৎপাদন শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। প্রথম দিকে কারখানা ভালই চলছিল। সে সময়ে স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলিয়ে ছ’শোর মতো শ্রমিক ছিলেন। পরে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। ২০১৩ সালে কারখানা কিছু দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন শর্তে সেই কারখানা আবার খোলা হয়েছিল। কিন্তু মাস দু’য়েক আগে উৎপাদন বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। কিছু দিন থেকে কারখানার যন্ত্রপাতি এবং তার বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। বিষয়টি ভাল ঠেকেনি শ্রমিকদের। তাঁরা গত বুধবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। সেখানে শ্রমিকরা বকেয়া পাওনা-গন্ডা মিটিয়ে দেওয়ার দাবিও করেছিলেন। কিন্তু কারখনা বন্ধ করে দেওয়ার কোনও ভাবনা-চিন্তা তাঁদের নেই বলে কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছিলেন বলে দাবি শ্রমিকদের।

কারখানার আর্থিক মন্দার কথা অবশ্য মানতে চাইছেন না এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সহ সভাপতি ও কারখানার শ্রমিক সুরত আলি বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘এই কারখানা থেকে আরও সাত-সাতটা কারখানা করা হয়েছে। আমরা কারখানা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করেছিলাম। শ্রমিক সংখ্যা কমানোর পক্ষেও সায় দিয়েছিলাম। স্থায়ী শ্রমিক হওয়া সত্ত্বেও অস্থায়ী শ্রমিকের মতো কাজ করেছি। ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ১২ ঘণ্টা কাজ করেছি। কিন্তু পয়সা আমরা নিইনি।’’ তিনি আরও বলেন, “কিছু দিন থেকে কর্তৃপক্ষের গতিবিধি ভাল ঠেকছিল না। অনেকেই এখানে বহু বছর কাজ করছি। আমাদের জন্য ক্ষতিপূরণ, বকেয়া বেতন-সহ অন্যান্য টাকা পয়সা দিয়ে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম বুধবারের বৈঠকে। ওঁরা বলেছিলেন, কারখানা তো বন্ধ করা হচ্ছে না। এ সব দাবি নিয়ে আলোচনা করছেন কেন? শুক্রবার থেকে আবার কাঁচামাল আসবে। উৎপাদন হবে।’’

শ্রমিকদের অসহযোগিতার কথা মানতে চাননি আইএনটিটিইউসি-র নদিয়া জেলা সভাপতি ও কল্যাণী পুরসভার কাউন্সিলর সুনীল তরফদারও। তিনি বলেন, ‘‘ওই কারখানার শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ যে অভিযোগ করছেন, তা ঠিক নয়। বরং, কারখানা সচল রাখার জন্য সব রকম সহযোগিতা করেছিলেন শ্রমিকেরা। যদি সত্যিই শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অসহযোগিতা করে থাকেন, তা হলে কর্তৃপক্ষ আগে আমাদের সে কথা জানাননি কেন?’’ সুনীলবাবুর আরও প্রশ্ন, ‘‘দু’মাস থেকে উৎপাদন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল, সেটা কাদের স্বার্থে? শ্রমিকদের মুখে সব শুনে আমার মনে হয়েছে, কারখানা চালানোর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অনীহা ছিল।’’ কল্যাণীর মহকুমাশাসক স্বপনকুমার কুণ্ডু জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁকে কেউ জানায়নি। তবে তিনি খোঁজ নেবেন। মহকুমাশাসকের কথায়, ‘‘ওঁদের কেউ আমাকে জানালে শ্রম দফতরকে বলব, মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে কারখানা যাতে খোলা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন