অ্যাম্বুল্যান্স-সিন্ডিকেটে জেরবার জেএনএম

ইট-বালি, চুন-সুড়কির সিন্ডিকেটের খবর নতুন নয়। তা বলে অ্যাম্বুল্যান্স, তার-ও সিন্ডিকেট? হ্যাঁ, কল্যাণীর জেএমএম হাসপাতাল চত্বরে তা-ও রয়েছে!

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কল্যাণী শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০০:৫৪
Share:

হাসপাতাল চত্বরেই দাঁড়িয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ইট-বালি, চুন-সুড়কির সিন্ডিকেটের খবর নতুন নয়।

Advertisement

তা বলে অ্যাম্বুল্যান্স, তার-ও সিন্ডিকেট? হ্যাঁ, কল্যাণীর জেএমএম হাসপাতাল চত্বরে তা-ও রয়েছে!

কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়েছিল বছর সাতাশের অমিয় বিশ্বসের। হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার পরে হরিণঘাটার পারুলিয়ার বাড়িতে ফিরতে তাঁর বাড়ির লোক খোঁজ করেছিলেন একটি অ্যাম্বুল্যান্সের। গোলটা বাধল তখনই।

Advertisement

জেএনএম-এর চত্বরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা সাফ জানিয়ে দিলেন— খরচ পড়বে তিনটি হাজার টাকা।

মেরেকেটে পনেরো কিলোমিটার পথ যেতে তিন হাজার টাকা! কল্যাণীর অন্যত্র খোঁজ করতে অ্যাম্বুল্যান্স মিলল ঠিকই, খরচ অনেক কম বারোশো টাকা। তবে বাধা একটাই— হাসপাতালের চত্বর থেকেই অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া নিতে হবে।

শুধু তাই নয়, অমিয়বাবুর পরিবারের দাবি, বাইরে থেকে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করার খবর পেয়ে প্রচ্ছন্ন হুমকিও শুনতে হয়েছে তাঁদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিয়বাবুর ঘটনাটা কোনও ব্যতিক্রমম নয়। জওহরলাল নেহেরু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিত্যদিন কোনও না কোনও রোগীর বাড়ির লোকজনকে এমনই অ্যাম্বুল্যান্স-সমস্যায় জেরবার হতে হয়। হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ওই তালিকায় এটা নিছক একটা সংজোযন মাত্র!

অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা মাঝে মাঝে ওয়ার্ড মাস্টারের অফিসে গিয়ে খোঁজ নেয়, কখন কোন রোগীকে অন্য হাসপাতালে ‘রেফার’ হচ্ছে কিংবা ছুটি হচ্ছে কোন রোগীর। তার পর ওই সব রোগীর পরিবারের লোকেদের উপরে চলে জুলুম।

স্বাস্থ্যভবন সূত্রেও জানা গিয়েছে, সরকারি হাসপাতাল চত্বরে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স রাখা আইন বিরুদ্ধ। তা সত্ত্বেও দিনের পর দিন ওই সিন্ডিকেটের দাপট চলছে কী করে?

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, ওই সিন্ডিকেটের মাথা যিনি তাঁকে চটিয়ে হাসপাতালে ‘কাজ’ করাই দুষ্কর। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘তিনি শাসক দলের স্থানীয় কাউন্সিলর অমর রায়। ওঁর কতাতেই হাসাপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের একাংসের দাপট। অ্যাম্বুল্যান্স-এর কারবারের রমরমাও ওঁর দৌলতেই।’’

স্বাস্থ্য ভবন থেকেও ওই হাসপাতালের সংগঠিত চক্রটিকে ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল। তবে, বলাই বাহুল্য তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সেখানে অন্য অ্যাম্বুল্যান্স-এর প্রবেশ কার্যত নিষিদ্ধ!

হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক বুক ঠুকেই জানাচ্ছেন, তাঁদের রমরমা হাসপাতাল থেকে উঠিয়ে দেবে কে! কেন? তিনি বলেন, ‘‘জেনে রাখুন দাদা আমাদের পিছনে অমরদা আছেন। উনিই সব দেখেন।’’

হাসপাতাল সূত্রেও জানা গিয়েছে, রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ ব্যাপারে অমরবাবুকেই স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। অনুরোধ শুনে অমরবাবুই ভরসা দিয়েছিলেন, ‘‘আমি দেখছি’’ বলে। তবে, তা ছিল নিছকই কথার কথা।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনে, শুনে তৃণমূলের ওই কাউন্সিলর অবশ্য পাল্টা অভিযোগের তির ছুড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দিকে—‘‘ওই অ্যাম্বুল্যান্সগুলিকে সরাতে তো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই আন্তরিক নন। আমি কী করব?’’

কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান সুশাল তালুকদারও একই সুরে বলছেন, ‘‘এমন সিন্ডিকেট রয়েছে বলে তো শুনিনি। আমাদের দলের কেউ তার সঙ্গে জড়িত বলেও কানে আসেনি।’’

হাসপাতালের সুপার স্নেহপ্রিয় চৌধুরী অবশ্য গোটা ঘটনার দায় এড়িয়ে গিয়েছেন। বলছেন, '‘‘এ ব্যাপারে নিয়ে আমি কোনও কথা বলব না।’’ তাহলে কে বলবেন?

হাসপাতালের এক চিকিৎসক অবশ্য আড়ালে বলেন, ‘‘হাসপাতালে থেকে অমরবাবুর বিরুদ্ধে মন্তব্য করার মতো বুকের পাটা কার আছে? কে আর খাল কেটে কুমীর আনতে চায় বলুন!’’ তবে, জেএনএম মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপ্যাল শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে কোনও বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স থাকার কথা নয়। কী করে তাদের এত রমরমা হয় বলতে পারব না।’’

হাসপাতাল কর্তাদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশও অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের মদত জোগাচ্ছেন। তবে, সে কথা মানতে চাননি চিকিৎসকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন