দশ টাকায় ভরপেট ডাল-ভাত

যা শুনে হাসছেন বেলডাঙার পুরপ্রধান ভরত ঝাওর। তিনি জানান, কোনও চমক নয়। আজ, মঙ্গলবার, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এই প্রকল্প শুরু হবে। নাম দেওয়া হয়েছে— ‘সুলভ অন্ন সাথী যোজনা’।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০২:৪০
Share:

পুরসভার সেই দেওয়াল লিখন। নিজস্ব চিত্র

শহরের দেওয়াল-লিখন দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই।

Advertisement

কোনও ভোটের প্রচার নয়। নয় কোনও পুজোর বিজ্ঞাপনও। সবুজের উপরে লাল রং দিয়ে বড় বড় করে লেখা— ১০ টাকায় দুপুরের আহার!

যা দেখে রীতিমতো হইচই চলছে তামাম শহরে। পাড়ার মোড়ে, চায়ের দোকানে, ভিড় বাজারে আপাতত আলোচনার বিষয় এটাই।

Advertisement

—‘এমনটা আবার সম্ভব নাকি?’

—‘সামনে তো কোনও ভোট নেই। তা হলে আবার এ কেমন চমক?’

—‘পুরসভা কি এ বার দানসত্র খুলল?’

—‘তা বাপু, ১০ টাকায় যদি পেট ভরে খাবার পাই, সে তো খুবই ভাল কথা!’

—‘হোটেল ব্যবসা তো তা হলে লাটে উঠবে!’

যা শুনে হাসছেন বেলডাঙার পুরপ্রধান ভরত ঝাওর। তিনি জানান, কোনও চমক নয়। আজ, মঙ্গলবার, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এই প্রকল্প শুরু হবে। নাম দেওয়া হয়েছে— ‘সুলভ অন্ন সাথী যোজনা’। প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য পুরসভার পুরপ্রধানদের থাকার কথা।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসেই পুরসভায় একটি আলোচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে ১০০ জনকে খাওয়ানো হবে ‘সম্পর্ক’ নামে পুরসভার অনুষ্ঠান বাড়িতে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে সেখানে ১০ টাকা জমা দিয়ে নিজের নাম লেখাতে হবে। যাঁরা টাকা দিয়ে নাম লেখাবেন তাঁরাই সে দিন খেতে পারবেন। এক টাকা থেকে ১০ টাকার কয়েন কিংবা নোট সবই নেওয়া হবে।

বছর কয়েক আগে ৫ টাকায় ডাল-ভাত খাওয়ানো শুরু করে ঝাড়খণ্ড সরকার। তামিলনাড়ুতে ‘আম্মা ক্যান্টিনে’ কম পয়সায় খাবার মেলে। পুরসভার দাবি, এ রাজ্যে অন্য কোনও সংস্থা এমন পদক্ষেপ করলেও কোনও পুরসভা এই প্রথম এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে।

পুরসভার এমন সিদ্ধান্তে শহরে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে। কর্মসূত্রে ও নানা কারণে এ শহরে দৈনিক বহু মানুষ আসেন। তাঁদের অনেকেরই হোটেলে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাঁদের কথায়, ‘‘হোটেলে শুধু সব্জি-ভাত খেতে গেলেই ৩৫-৪০ টাকা দিতে হয়। সেখানে যদি ১০ টাকায় ডাল-ভাত মেলে, তার থেকে ভাল খবর আর কিছু হতে পারে না।’’ স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের একাংশও পুরসভার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, রান্না করবেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। ডাল-ভাত, খিচুড়ির পাশাপাশি সপ্তাহে এক বা দু’দিন পাতে যাতে ডিম ও মাছ রাখা যায় তেমন পরিকল্পনাও রয়েছে। এখন সব মিলিয়ে মাথাপিছু খরচ পড়়বে ১৫-১৬ টাকা। যিনি খাবেন তিনি ১০ টাকা দেবেন। আর বাকি ৫-৬ টাকা দেওয়া হবে পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে।

প্রশ্নটা উঠছে এখানেই। পুরসভার নিজস্ব তহবিলের টাকা খরচ করার কথা উন্নয়নের খাতে। সেখানে এই খরচ কতটা যুক্তিযুক্ত? শহরের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এটা যদি ‘নো প্রফিট-নো লস’ পদ্ধতিতে চালানো হতো, সেখানেও একটা কথা ছিল। কিন্তু উন্নয়ন না করে সেই টাকায় এমনটা কি করা যায়? পুরসভা এ ভাবে কত দিন চালাতে পারবে?’’

পুরপ্রধান ভরত ঝাওর বলছেন, ‘‘আপাত ভাবে আমরা পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে টাকা দিয়ে চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাঁরাও সহযোগিতা করবেন। ফলে তখন আর আমাদের টাকা দেওয়ার দরকার হবে না। তাছাড়া পরে ১০০ থেকে সংখ্যাটা আরও বাড়ানো হবে। তখন খরচও অনেকটা কমে যাবে।’’

অসহায়, যাঁদের দু’বেলা খাওয়া জোটে না এমন পরিবারের মানুষদের জন্য বছর চারেক আগে রাজ্য সরকার চালু করেছিলেন সহায় প্রকল্প। নিরন্ন মানুষের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে পঞ্চায়েতগুলিতে ওই প্রকল্প চালু হয়। সে প্রকল্পও সর্বত্র ‘সহায়’ হয়নি। এখন পুরসভার ‘সুলভ অন্ন সাথী যোজনা’ কত দিন সুলভ থাকে সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন