কী করে বুঝব, আপনি শিক্ষক

জলঙ্গির চর পরাশপুর রবীন্দ্রনাথ-রোকেয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিম রেজা এ বার বেশ সমস্যায় পড়েন। তিনি যে ভারতীয় তা প্রমাণ করার জন্য পকেটে রয়েছে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড। কিন্তু তিনি যে শিক্ষক সে পরিচয়পত্রও তো তাঁর কাছে নেই।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০৪
Share:

পদ্মার চর ভেঙে হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। দ্রুত পা না চালালে বেশ দেরি হয়ে যাবে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজরদারি চৌকির কাছে আসতেই তাঁকে থামতে হল।

Advertisement

বিএসএফ জওয়ান, প্রশ্ন ছুড়ল

—কোথায় যাবেন?

Advertisement

—স্কুলে।

—কেন?

—কেন মানে! আমি শিক্ষক।

—কী করে বুঝব আপনি শিক্ষক?

জলঙ্গির চর পরাশপুর রবীন্দ্রনাথ-রোকেয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিম রেজা এ বার বেশ সমস্যায় পড়েন। তিনি যে ভারতীয় তা প্রমাণ করার জন্য পকেটে রয়েছে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড। কিন্তু তিনি যে শিক্ষক সে পরিচয়পত্রও তো তাঁর কাছে নেই। শেষতক ওই শিক্ষককে ফোন করতে হয় স্থানীয় বিডিও, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে। তাঁরা কথা বলেন বিএসএফের সঙ্গে। তবেই মেলে স্কুলে যাওয়ার ছাড়পত্র। পরে অবশ্য মুখচেনা হয়ে যাওয়ায় তেমন সমস্যা আর হয়নি।

করিমপুরের নাটনা থেকে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে চরমেঘনা প্রাথমিক স্কুলে যান বিপদ প্রামাণিক। তিনিই স্কুলের প্রধানশিক্ষক। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘একটা সময় স্কুল যাওয়া বেশ কঠিন ছিল। কাঁটাতারের গেট পেরনোর সময়ে প্রশ্নে প্রশ্নে হয়রান করে দিত বিএসএফ। পরে চেনাজানা হয়ে গেলে সমস্যা বাড়ত আবার যখন ব্যাটেলিয়ন বদলে যেত।’’ বিপদবাবু বলছেন, ‘‘বছর দেড়েক আগে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ থেকে আমাদের সচিত্র পরিচয়পত্র করে দেওয়া হয়েছে। এখন ওই পরিচয়পত্র দেখালে আর সমস্যা হয় না।’’

আরও পড়ুন: সব কাজেই লাল ফিতে, ক্ষুব্ধ মমতা

শুধু সীমান্ত বলে নয়, পরিচয়পত্র না থাকায় সমস্যা হয় অন্যত্রও। এ বার মুর্শিদাবাদের শিক্ষকদের পরিচয়পত্র তৈরি করে নদিয়ার পথে হাঁটতে চাইছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, মার্চ মাসের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরিচয়পত্র হাতে পেয়ে যাবেন। মুর্শিদাবাদে ১২২৪৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আছে। তাঁদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র তৈরি বাবদ ৩০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। পরিচয়পত্রে লেখা থাকবে শিক্ষকের নাম, ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ, মোবাইল নম্বর, মেল আইডি, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের ঠিকানা। ওই শিক্ষক কোন চক্রের তা-ও লেখা থাকবে। পরাশপুরের শিক্ষক সেলিম রেজা বলছেন, ‘‘বিএসএফের সেই প্রশ্নটা আমি কোনও দিন ভুলব না—‘কী করে বুঝব, আপনি শিক্ষক?’ পরিচয়পত্র পেলে সমস্যাটা মিটবে।’’

মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান তথা জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) নীহারকান্তি ভট্টাচার্য বলছেন, “পরিচয়পত্র না থাকায় সীমান্তে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমস্যায় পড়তে হয়। নির্বাচনের সময়েও শিক্ষক-শিক্ষিকারা সমস্যায় পড়তেন। তাই এই উদ্যোগ।” নদিয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ রায় বলেছেন, “বছর দেড়েক আগে আমরা এই সমস্যার কারণেই শিক্ষকদের সচিত্র পরিচয়পত্র তৈরি করে দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন