School Reopening

School Teacher: স্কুল খোলার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ শিক্ষকমহলের

যদিও এ বারে প্রশাসনের স্কুল-কলেজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ ছিল রাজ্যবাসীর একাংশের মনে।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

নদিয়া শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৪৭
Share:

সার্বিক ভাবে স্কুল খোলার দাবিতে পড়ুয়ারা। সোমবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

বাগদেবীর আরাধনার আবহে রাজ্যে খুলে যাচ্ছে বিদ্যায়তন। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হচ্ছে। সোমবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণায় খুশি শিক্ষক, পড়ুয়া এবং অভিভাবক মহল। এর আগে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর গত নভেম্বরে চালু হয়েছিল রাজ্যের সকল স্কুল-কলেজ। কিন্তু ওমিক্রন সংক্রমণে তৃতীয় ঢেউয়ের জেরে ফের গত ২ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যায় স্কুল-কলেজ। ঠিক এক মাসের মাথায় আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি আবার খুলতে চলেছে স্কুল।

Advertisement

যদিও এ বারে প্রশাসনের স্কুল-কলেজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ ছিল রাজ্যবাসীর একাংশের মনে। বাকি সব খোলা থাকা সত্ত্বেও কেবল মাত্র পঠনপাঠন বন্ধের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। রাজ্য জুড়ে চলছিল পড়ুয়া, শিক্ষক, অভিভাবকদের প্রতিবাদ-আন্দোলন। সেই প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুল খোলার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সব মহল। এ দিন জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানেরা জানিয়েছেন, তাঁরা তৈরি রয়েছেন।

কল্যাণী ইউনিভার্সিটি এক্সপেরিমেন্টাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছন্দা বিশ্বাস বলেন, “খুব দরকার ছিল স্কুল খুলে দেওয়া। দীর্ঘ দিন স্কুলে না যাওয়ার ফলে পড়ুয়ারা শুধু পড়াশোনা নয়, আরও অনেক বিষয়ে পিছিয়ে পড়ছে। যেটা স্কুল না খুললে পূরণ করা দুরুহ ব্যাপার। সুতরাং, এই স্কুল খোলার সিদ্ধান্তে আমরা তো বটেই, গোটা শিক্ষামহল খুশি।’’ তাঁর কথায়, ‘তা ছাড়া, এই ভাইরাস শিশুদের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতিকর কিছু নয়। আর সে ক্ষতি স্কুল বন্ধ থাকলেও হচ্ছে। সুতরাং, ওরা স্কুলে আসুক। শরীরে-মনে সুস্থ থাকুক। আমরা পড়ুয়াদের আসার অপেক্ষায় আছি।”

Advertisement

নবদ্বীপ বকুলতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘ ভাল লাগছে যে, ঘোষণা হল একেবারে সরস্বতী পুজোর ঠিক আগেই। যদিও আমরা নিয়ম করে রুটিন বেঁধে অনলাইন ক্লাসে পড়ানোর কাজ করে চলেছি গত প্রায় দুই বছর ধরে। ইতিমধ্যে পঠন সেতুর মাধ্যমেও অনলাইনে ছাত্রদের পড়ানোর কাজ করছেন শিক্ষকেরা। তবে স্কুলের ক্লাসঘরে পড়ুয়াদের পড়ানো অন্য রকম অনুভূতি।”

সীমান্ত ঘেঁষা করিমপুর জগন্নাথ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রজতকুমার সরকার বলেন, “শিক্ষকেরা মুখিয়েছিলেন এই ঘোষণা শোনার জন্য। ভাল লাগছে, এ বার স্কুল আরও বেশি করে ভরে উঠবে, অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারাও আসবে। এখনও সম্পূর্ণ বিধিনিয়ম হাতে আসেনি। তবে স্কুল সব দিক থেকে প্রস্তুত।”

স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ থাকলেও ইতিমধ্যে উচ্চ প্রাথমিক স্তরের জন্য বিদ্যালয় শিক্ষাবিভাগের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির তত্ত্বাবধানে প্রায় সমস্ত বিষয়ের ‘ব্রিজ কোর্স’ তৈরি হয়েছে। ‘পঠন সেতু’ ও ‘শিখন সেতু’ নাম দিয়ে বিভিন্ন ক্লাস বিষয়ভিত্তিক বই স্কুলে স্কুলে পৌঁছে গিয়েছে।

চাকদহ রামলাল অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক রিপন পাল বলেন, “ওই বইগুলি ছাত্রছাত্রীদের পূর্ববর্তী ক্লাসের সঙ্গে বর্তমান ক্লাসের সেতুবন্ধ হিসাবে কাজ করবে। শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের অসম্পূর্ণতা পূরণে ওই বইয়ের সহায়তা নেবেন। এই বই শিক্ষার্থীদের কাছে পরিভাষায় ‘অ্যাকসিলারেটেড লার্নিং প্যাকেজ’ হিসেবে কাজ করবে। এটা অত্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ।”

শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কিংশুক চক্রবর্তী বলেন, “আমরা এই ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলাম। বিদ্যালয় খুলছে, এর চেয়ে ভাল খবর শিক্ষকের কাছে কী হতে পারে!” তবে পাড়ায়-পাড়ায় স্কুল কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে তাঁর। তিনি বলেন, “পাড়ায় শিক্ষালয় কতটা ফলপ্রসূ হবে, যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। কারণ, একই পাড়ায় একই বিদ্যালয়ের কত জন ছাত্র বা ছাত্রী বসবাস করে, সেটা ভাবাও জরুরি। সে ক্ষেত্রে ক্লাস কী করে হবে?”

স্কুল প্রধানেরা জানাচ্ছেন, পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয় প্রকল্পের মধ্যে বিদ্যালয়ের পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা প্রত্যক্ষ পড়াশোনার মধ্যে চলে আসবে। তাঁদের অনুমান, বারো বছরের ঊর্ধ্বে টিকা দেওয়া হলে গেলেই ছোটদের জন্য স্কুল খুলে যাবে। সে ক্ষেত্রে, সরকারি নির্দেশিকা শুধু সময়ের অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন