ধূসর এক বোর্ডে ভাঙা চকে ডেঙ্গির ভয়াবহতা বোঝানোর বিরাম নেই। স্কুলের দেওয়ালে অতিকায় এডিস মশার ছবি এঁকে, কতটা মারাত্মক সে, বোঝানো হচ্ছে তাও। মফস্সলের স্কুলে ডেঙ্গি নিয়ে ক্যুইজের প্রচলনও শুরু হয়েছে হালে।
তবে জ্বর জারি চলছেই। বহরমপুর হাসপাতালের এক চিকিৎসক ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘জ্বর তো ছেলেপুলেদের হবেই। তবে মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গির বাহক এডিস মশা দিনের আতঙ্ক। আর প্রায় অন্ধকার স্কুল ঘরে ছেলেমেয়েরা কাটায় দিনের একটা বড় অংশ। বাড়ি গিয়ে মশারির নীচে শুলে আর হবেটা কি!’’ তাদের খোলা পায়ে মশারা তাই কামড়েই চলেছে।
আর তা থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে যে, জেলার আনাচ কানাচে ছড়িয়ে থাকা স্কুলগুলোর চেহারা নিয়ে। ক্লাশঘরের আশপাশে সদ্য বিদায় নেওয়া বর্ষার আগাছার ভিড় যথেষ্ট। কোথাও জমে রয়েছে জল। বেশ কিছু স্কুল আবর্জনার আস্তাকুঁড়ও হয়ে রয়েছে। এডিস মশার বাড় বৃদ্ধির যা আদর্শ পরিবেশ।
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা সতর্ক করে দিচ্ছেন, ‘‘দেখুন ডেঙ্গি নিয়ে বেশি কথা বললে চাকরি নিয়ে টানাপড়েন হবে, তবে বলে রাখি, ডেঙ্গি থেকে বাঁচতে ছেলেপুলেদের জ্বর হলেই যেন পরীক্ষা করায়।’’ ডেঙ্গির আঁতুরঘর হয়ে থাকা স্কুলগুলি সম্পর্কে জেলা প্রশাসনের হেলদোল না থাকলেও স্কুলের শিক্ষক থেকে অভিভাবকেরা যে চিন্তিত তা তাঁদের কথা থেকেই স্পষ্ট। মুর্শিদাবাদে হিকমপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলন, “ডেঙ্গির বিরুদ্ধে আমাদের প্রচার করার বিষয়ে কোনও রকম নির্দেশিকা আসেনি। তবে স্কুল শিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইটে যে সব নির্দেশিকা রয়েছে তা মেনেই প্রচার হচ্ছে।’’ বেলডাঙ্গার সুতিঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ হিলালউদ্দিন বলছেন, “যতটুকু যা বুঝি সেটুকুতেই বুক বেঁধেছি, প্রশাসনের কোনও নির্দেশই আসেনি।’’ স্কুলের অবস্থা জানেন অভিভাবকেরাও। বাজার থেকে মশা নিরোধক যা পাচ্ছেন, ছেলে-মেয়েদের গায়ে জামায় তাই ঘষে দিয়ে ডেঙ্গি রুখতে চাইছেন তাঁরা। কি বলছে দু’জেলার স্বাস্থ্য দফতর? মুর্শিদাবাদের মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলছেন, “সব স্কুলে হেলথ প্রকল্প চালু আছে। সেখানে পড়ুয়াদের সচেতন করার কথা।’’ করছেন কি? উত্তর মেলেনি। আতঙ্কের হুল তাই ফুটেই থাকল পড়ুয়াদের হাতে-পায়ে!