খুদেদের ছাতা কিনে দিলেন শিক্ষকেরাই

ছাতা পেয়ে পড়ুয়ারা বলল, আর স্কুল কামাই হবে না

ক’দিন ধরে স্কুলে আসছিল না প্রাক প্রাথমিকের খুদে পড়ুয়া বর্ষা খাতুন। টানা তিন দিন স্কুলমুখো হয়নি তৃতীয় শ্রেণির নুরুল হাসান মণ্ডলও।কী ব্যাপার? তেহট্টের অভয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিকুল ইসলাম ছুটেছিলেন দু’জনের বাড়িতেই।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

তেহট্ট শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ১৩:৪০
Share:

ছাতা-হাতে: ছাতা না থাকার কারণে গ্রীষ্ম ও বর্ষায় পড়ুয়াদের অনুপস্থিতির হার বেড়ে যায়। তাই পাঁচ শিক্ষক সিদ্ধান্ত নেন, নিজেরা চাঁদা তুলে স্কুলের পড়ুয়াদের কিনে দিলেন ছাতা। নিজস্ব চিত্র

ক’দিন ধরে স্কুলে আসছিল না প্রাক প্রাথমিকের খুদে পড়ুয়া বর্ষা খাতুন। টানা তিন দিন স্কুলমুখো হয়নি তৃতীয় শ্রেণির নুরুল হাসান মণ্ডলও।

Advertisement

কী ব্যাপার? তেহট্টের অভয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিকুল ইসলাম ছুটেছিলেন দু’জনের বাড়িতেই। দুই পড়ুয়া ও তাদের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, চড়া রোদে স্কুলে যাতায়াত করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল বর্ষা। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এসেছিল নুরুলের। ‘‘ছাতা কিনে দেননি কেন?’’— সফিকুলের এমন প্রশ্নে দুই পরিবারের লোকজন জানিয়েছিলেন, ‘‘ছাতা কেনার টাকা কোথায় মাস্টার? আমরাই তো টোকা বা গামছা মাথায় রোদ-বৃষ্টিতে মাঠে কাজ করি। অসুখেও পড়ি। ওরাও ভাল হয়ে গেলে ফের স্কুলে যাবে।’’

বাড়ি ফিরে সারারাত ঘুমোতে পারেননি সফিকুল। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ও তাঁর সহশিক্ষকেরা স্কুলের জন্য দিনরাত এক করে ফেলেছেন। তিনি বুঝতে পারেন, ছাতা না থাকার কারণেই গ্রীষ্ম ও বর্ষায় পড়ুয়াদের অনুপস্থিতির হার বেড়ে যায়। পরের দিন স্কুলে এসে সহশিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন সফিকুল। তারপর পাঁচ শিক্ষক সিদ্ধান্ত নেন, নিজেরা চাঁদা তুলে স্কুলের ১১৭ জন পড়ুয়ার জন্য ছাতা কিনবেন। দিন কয়েক আগে সাড়ে আট হাজার টাকা খরচ করে পড়ুয়াদের ছাতা কিনে দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

অভিভাবক আমিরচাঁদ শেখ, বেলুকা বিবি ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ২০১১ সালে পলসণ্ডার বারুইপাড়ার বাসিন্দা সফিকুল এই স্কুলে যোগ দেওয়ার পরেই স্কুলের চেহারা বদলাতে শুরু করে। স্কুলছুট নেই। ২০১২ সালে এই স্কুল নির্মল বিদ্যালয়, ২০১৬ সালে শিশু মিত্র পুরস্কার পেয়েছে। স্কুলে শিশু সংসদের পাশাপাশি রয়েছে পরিস্রুত পানীয় জল, প্রাথমিক চিকিৎসার, জৈব গ্যাস, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। রয়েছে অভিযোগ জানানোর জন্য নির্দিষ্ট বিভাগ, পাঠাগার, অতিথিদের বিশ্রাম কক্ষ, জল ধরো জল ভরো প্রকল্প, ফুল ও সব্জি বাগান।

সফিকুল জানান, স্কুলের পড়ুয়ারা সকলেই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের সন্তান। ওদের জন্য ছাতার কথা ভাবতেই পারেন না কেউ। সরকার পোশাক, ব্যাগ, বই, জুতো দিলেও ছাতা দেয় না। সেই কারণে এমন পদক্ষেপ। নতুন ছাতা পেয়ে বর্ষা, নুরুলরা এখন বলছে, ‘‘এ বার আর স্কুল কামাই হবে না।’’

তেহট্ট ২ বিডিও অভিজিৎ চৌধুরী বলছেন, ‘‘ওই স্কুলের কথা শুনেছি। শিক্ষকদের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন