মৃত সিআরপিএফ জওয়ান নির্মল ঘোষ।
চার সপ্তাহের ছুটিটা আর একটু যদি বাড়িয়ে নিত!
বন্ধ টিভির সামনে বিড়বিড় করছেন দুই বন্ধু, সন্তু আর তকাই। খবরটা সদ্য এসেছে। ঝিঁঝির ডাক উজিয়ে বাড়ির ভেতর থেকে ডুকরে আসছে কান্না। দেহ আসার সময় হল।
ছুটি শেষে, ৬ তারিখ বেলডাঙার মহুলা ছেড়ে ফিরে গিয়েছিলেন ঝাড়খন্ডের ক্যাম্পে। দিন চারেকের মধ্যেই ফিরে আসছেন সিআরপিএফ জওয়ান নির্মল ঘোষ, কফিনবন্দি হয়ে। তাঁর ছেলেবেলার বন্ধু তকাই বলছিলেন, ‘‘কেমন অস্থির লাগছে জানেন, এই সে দিনও এক সঙ্গে রাত জেগে খেলা দেখলাম। আর্জেন্টিনা হেরে যাওয়া পরে বলছিল, ‘এটা ঠিক হল না জানিস!’’ এটা কি ঠিক হল, এই অসময়ে চলে যাওয়া?
বালিশে মাথা কুটে একই কথা বলে চলেছেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মামনি। ঘোরের মধ্যে একই কথা, ‘‘এটা কি হল, ঠিক হল না, এটা ঠিক হল না!’’
শোকাহত মা ভাগ্যবতী। বুধবার মহুলায়। নিজস্ব চিত্র
মা ভাগ্যবতী থম মেরে বসে রয়েছেন ঘরের কোনায়। পড়শিদের কাছে ভেজা গলায় বলছেন, ‘‘প্রায় এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল ছেলেটা। সে দিন যাওয়ার আগে বলল, ‘দেখব, পুজোয় ছুটি পাই কিনা’ আর দেখ, চলে এল এত তাড়াতাড়ি!’’
বুধবার সকালে ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলা এলাকায় জঙ্গিদের ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। বুধবার, দেহ এল অনেক রাতে। সেই বর্ষা রাতেও গ্রাম ভেঙে পড়ল তাঁর কফিনের পাশে।
২০১১ সালে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন নির্মল। তিন সীমান্ত ঘুরে বছরখানেক ধরে বাড়ির কাছে ঝাড়খণ্ডেই বদলি হয়েছিলেন তিনি। সুঠাম চেহারা। খেলাধুলোয় পাঁচ গ্রামের লোক এক ডাকে চিনত তাঁকে। খবরটা তাই ছড়িয়েছে বাতাসের চেয়েও দ্রুত। আশপাশের গ্রাম থেকেও মানুষ তাই ভিড় করছেন বাড়িতে।
ছেলেবেলার বন্ধু তকাই আর সঞ্জয় ঘোষ বলছেন, ‘‘ফুটবল- ক্রিকেট দুটোই ভাল খেলত। বিশ্বকাপ দেখার সময় যেন মাঠেই পৌঁছে যেত। এত হইচই করে খেলা দেখলাম। আর সেই ফাইনালটাই দেখে যেতে পারল না রে!’’