মনার জন্য হাঁটল বহরমপুর

তিনি কোনও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী নন। এমনকী কোনও প্রতিষ্ঠানের ‘মাথা’ও নন। তাঁর আদি নিবাস কোথায় সেটাও কেউ জানেন না। এমনকী প্রকৃত নাম কী, তাও কেউ জানেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ০১:৩৫
Share:

ভিখারিণী মনা

তিনি কোনও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী নন। এমনকী কোনও প্রতিষ্ঠানের ‘মাথা’ও নন। তাঁর আদি নিবাস কোথায় সেটাও কেউ জানেন না। এমনকী প্রকৃত নাম কী, তাও কেউ জানেন না। তবুও গত রবিবার রাতে তাঁর শেষযাত্রায় গোটা লালগোলা বাজারের রাস্তার দু’পাশে কাতারে কাতারে মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন। চোখের জলে বিদায় দেন।

Advertisement

তাঁর শ্মশান যাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলেন পঞ্চায়েতের প্রধান থেকে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্তা, পুলিশ কর্মী থেকে টুকটুক চালক— প্রায় সবাই। তাঁর প্রকৃত নাম না জানলেও লোকমুখে তিনি পরিচিত হয়ে গিয়েছেন ‘মনা’, বা ‘মনা পাগলি’ নামে। ভিক্ষাজীবী ওই মহিলা ১৯৭২ সাল নাগাদ ২০-২২ বছর বয়সে আশ্রয় নেন লালগোলা থানা প্রাঙ্গণে। তিনি ভিক্ষাজীবী হলেও আর পাঁচজন ভিখিরির থেকে তাঁর প্রকৃতি ছিল ভিন্ন। সেই ভিন্নতাই তাঁকে লালগোলার মানুষের আপনজন করেছে। তাঁর মৃত্যু সংবাদ স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সদ্য মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে। পদ্মার সীমান্ত পারাপারে তখন কোনও কড়াকড়ি ছিল না। দু’দেশের সীমান্ত পারপার ছিল অবাধ। একদিন ছিপছিপে চেহারার চালচুলোহীন ছোট্টখাট্টো এক তরুণীর উদয় হল লালগোলায়। আশ্রয় নিলেন লালগোলা থানা চত্বরে। তাঁর কথার টানে রয়েছে বাংলাদেশের আঞ্চলিকতা। ফলে অনেকেই তাঁকে বাংলাদেশি বলেই মনে করেন। কথা বিশেষ বলতেন না। হাত বাড়িয়ে তিনি কেবল বলতেন, ‘‘মনা ২ টাকা দে!’’ কাউকে বলতেন, ‘‘মনা ৫ টাকা দে!’’ সেই থেকেই তাঁর নাম ‘মনা’। চাহিদার থেকে বেশি টাকা দিলে তিনি বাড়তিটা ফেরত দিতেন। প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে প্রতিদিন সকালে ওই থানার ওসির কাছ থেকে তাঁর বরাদ্দ ছিল ১০ টাকা। হাত পেতে উপার্জন করা ওই অর্থে তিনি মাটির হাঁড়িতে রান্না করতেন। কাঠের জ্বালানিতে। কয়েকটি কুকুর, কয়েকটি ছাগল ও ২-১টি গরু সঙ্গে নিয়ে তিনি খেতে বসতেন। এ অভ্যাস নিত্য দিনের।

কয়েক বছর আগে এই মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন বীরেন্দ্র। তিনি একবার লালগোলা থানা পরিদর্শনে গিয়ে ঘর করে দিতে চেয়েছিলেন। ‘মনা পাগলি’ হাসিমুখে পুলিশ সুপারের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তিনিই লালগোলার মানুষকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন। তাঁর শ্মশান সঙ্গী লালগোলা পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান অজয় ঘোষ বলেন, ‘‘শ্মশান খরচের টাকা কারও কাছে চাইতে হয়নি। সবাই স্বেচ্ছায় দিয়েছেন। মৃত্যুর ১৩ দিনের মাথায় ২০০০ জনের নরনারায়ণ ভোজ দিয়ে তাঁর শ্রাদ্ধশান্তি করা হবে।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন