পাখির বদলে গয়না শিকার

পুলিশ জানিয়েছে, পাখি শিকারের নাম করে ওই তিন জন বাড়িতে চুরি করতেই ঢুকেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত অমর বেদ, বংশি বেদ ও মহাবির বেদের বাড়ি বর্ধমানের অণ্ডাল এলাকার হরিপুরে। বর্ধমান জেলা পুলিশের সাহায্য নিয়ে ওই তিন জনের প্রকৃত পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪৮
Share:

সরু বাঁশের মাথায় ফলা। কাঁধে বড় থলে। কোমরে বাঁধা একটা কাদা-মাটি মাখা চাদর। ছিপছিপে চেহারার তিন যুবককে দেখে সকলেই ভেবেছিলেন, এই সময়েই তো ওই যাযাবরেরা এই এলাকায় এসে শিকার করে। কিন্তু শুক্রবার ডোমকলের শাহাবাজপুরে তাঁদের বিরুদ্ধেই সোনার গয়না চুরি ও তির ছোড়ার অভিযোগ উঠল। গ্রামের লোকজনের তাড়া খেয়ে পালানোর সময় তাদের ছোড়া তিরে জখম হন ছয়মুদ্দিন শেখ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

তবে ওই তিন যুবকও পালাতে পারেননি। এলাকার লোকজন তাঁদের ধরে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ জানিয়েছে, পাখি শিকারের নাম করে ওই তিন জন বাড়িতে চুরি করতেই ঢুকেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত অমর বেদ, বংশি বেদ ও মহাবির বেদের বাড়ি বর্ধমানের অণ্ডাল এলাকার হরিপুরে। বর্ধমান জেলা পুলিশের সাহায্য নিয়ে ওই তিন জনের প্রকৃত পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তখন সকাল সাড়ে ৯টা। গ্রামের আলমগীর শেখের বাড়ি ফাঁকা। স্ত্রী রূপা বিবি ছাদে ধান মেলছেন। জনা তিনেক যুবককে বাড়ির পাশে দেখেও তাঁরা কোনও গুরুত্ব দেননি। বেশ কিছুক্ষণ পরে ঘরে এসে তিনি দেখেন, আলমারি খোলা। গয়নার ব্যাগটাও নীচে পড়ে। সবর্নাশ হয়েছে বুঝতে পেরেই তিনি চিৎকার শুরু করেন। ছুটে আসেন পড়শিরা। একে একে গ্রামের প্রায় হাজারখানেক লোকজন জড়ো হয়ে যান।

Advertisement

বাড়ির পিছনে ভৈরব নদীর পাড় ধরে শুরু হয় তল্লাশি। কিছুক্ষণ পরে ছয়মুদ্দিনের নজরে আসে কাশবনের ভিতরে তিন যুবক লুকিয়ে আছেন। সে দিকে যেতেই ছয়মুদ্দিনকে লক্ষ করে তির ও বর্শা ছোড়ে তারা। গুরুতর জখম হন ছয়মুদ্দিন। এরপরে গ্রামবাসীরা ওই তিন জনকে তাড়া করে ধরে ফেলেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। রূপা বিবির কথায়, ‘‘এমন লোকজনকে সেই ছোট থেকেই দেখছি। ওরা তো এই সময় শিকার করতে আসে। কিন্তু কখনও ওরা চুরি করে বলে শুনিনি।’’

শেখ পরিবারের সদস্য গোলাম শেখের দাবি, ‘‘ওরা যে দক্ষতার সঙ্গে আজ চুরি করেছে তাতে মনে হচ্ছে এ কাজে ওরা বেশ দড়। দু’জন বাইরে দাঁড়িয়ে পাখি মারার ভান করে পাহারা দিচ্ছিল। আর এক জন ভিতরে ঢুকে চুরি করেছে।’’ ধৃতদের জিজ্ঞাসা করেও পুলিশ তেমনটাই পেয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এমন কাজে এই তিন জন নয়, একটা বড় চক্র আছে বলেই মনে হচ্ছে।’’

রূপা বিবি বলছেন, ‘‘ছেলেরা ভিনরাজ্যে কাজ করে। তাঁদের পাঠানো টাকায় বড় কষ্টে গয়না তৈরি করিয়েছি। সে গয়না রাখার জায়গা বলতে ওই আলমারিটাই। সেখানেই যে ওরা হাত বাড়াবে কে জানত!’’ তবে শেষ পর্যন্ত খোয়া যাওয়া সব গয়না ধৃতদের ব্যাগ, পকেট, ও কাশবন থেকে উদ্ধার হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন