তৃণমূলের দ্বন্দ্বে রাতে বোমাবাজি

মঙ্গলবার রাতেই জেলার পদস্থ পুলিশ কর্তাদের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে বহু চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। হাতিশালা, মহেশনগর— দু’টি গ্রামেই প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাপড়া শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২০
Share:

বোমায় উড়ে গিয়েছে ঘরের চালা। চাপড়ার হাতিশালায়। নিজস্ব চিত্র

সংঘর্ষের খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিল পুলিশ। তা সত্বেও থামানো যায়নি বোমাবাজি। পুলিশের সামনেই চলে বোমা-গুলি। চাপড়ার হাতিশালা-মহেশনগর গ্রামে মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে ওই সংঘর্ষ বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।

Advertisement

ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে তিন জনকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। রাতের অন্ধকারে কয়েকজন আহতকে নৌকায় নদী পার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। যদিও তাঁদের কোনও সন্ধান পাওয়া যায় নি। গ্রামে বহিরাগত আনা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতেই জেলার পদস্থ পুলিশ কর্তাদের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে বহু চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। হাতিশালা, মহেশনগরদুটি গ্রামেই প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাপড়া ব্লকের হাতিশালা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪টি আসনেই তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। কিন্তু প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে প্রথম থেকেই দলের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। বিদায়ী উপপ্রধান লিয়াকৎ আলি মণ্ডল এবং সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া কউসর শেখের গোষ্ঠীর মধ্যে এই দ্বন্দ্ব বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ দীর্ঘ দিনের।

Advertisement

২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পর বোমা মেরে এক তৃণমূল কর্মীকে খুন করার অভিযোগ রয়েছে কউসরের বিরুদ্ধে। তিনি সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দুপক্ষের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াই চলছে। এবার ভোটের পরে প্রধান নির্বাচন নিয়ে সেই উত্তেজনা চরম আকার নেয়। দিন কয়েক আগেও রাতের অন্ধকারে বোমার শব্দে কেপে উঠেছিল হাতিশালা গ্রাম।

ভিতরে ভিতরে গ্রামে প্রচুর বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র মজুত হতে থাকে। হাতিশালার পাশাপাশি একই ভাবে উত্তপ্ত হতে থাকে পাশের গ্রাম মহেশনগরও। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে প্রথমে মহেশনগরে লিয়াকত আলি মণ্ডলের এক অনুগামীকে মারধর করে কউসরের লোকজন। তারই বদলা নিতে মঙ্গলবার রাতে বোমা-পিস্তল নিয়ে কউসরের বাড়িতে চড়াও হয় লিয়াকত পক্ষের ইনু শেখ ও তার লোকজন। শুরু হয় ব্যাপক বোমাবাজি। সঙ্গে চলে গুলি। গোটা গ্রাম কার্যত আতঙ্কে সিঁটিয়ে যায়।

এই ঘটনায় কার্যত বিব্রত হয়ে পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমান বলেন, “কাকে প্রধান করা হবে তা ঠিক করার জন্য গাইডলাইন ঠিক করে দিয়েছে দল। সেই মতোই প্রধান নির্বাচন করা হবে। এ সব আমরা কোন ভাবেই বরদাস্ত না।” গ্রামে শান্তি ফেরাতে দলের রং না দেখেই পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বুধবার সকাল থেকে দুই গ্রামেই শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি। ভয়ে গ্রাম ছাড়া অধিকাংশ বাড়ির পুরুষেরা। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমারকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন