রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।
সংস্কৃতে সুপণ্ডিত শঙ্করনাথ ভট্টাচার্য গুরুগৃহে থেকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভে বিশ্বাসী ছিলেন। নিজের সামর্থ্য মতো দুস্থঃ ছাত্রদের সাহায্যও করতেন। কিন্তু সব ছাত্রের ভার নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। বাবার সেই স্বপ্নকে পূরণ করতে এ গিয়ে এলেন ছেলে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। বাবা শঙ্করনাথের স্মৃতিতে তিনি নবদ্বীপের একাধিক স্কুলে একলাখ করে টাকা দিয়েছেন। দুঃস্থ পড়ুয়াদের সাহয্যের পাশাপাশি এই সময়েও সংস্কৃত চর্চা যাতে অব্যাহত থাকে তার জন্য প্রতি বছর সংস্কৃত ভাষার কৃতী ছাত্রছাত্রীদের ওই টাকা থেকে বৃত্তি দেওয়া হবে।
নবদ্বীপের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথবাবুদের শিকড় পুরুষানুক্রমে জড়িয়ে আছে। ঠাকুরদা কেদারনাথ সাংখ্যতীর্থ ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ এবং পণ্ডিত। বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিং জেলার গৌরীপুরের রাজা ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সভাগায়ক। তিনি সঙ্গীত রত্নাকরের উপর একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথবাবুর বাবা শঙ্করনাথ নবদ্বীপ হিন্দু স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। পরে হুগলির বাগাটি কলেজে অধ্যপনা করেন।
চন্দননগরের সরকারি কলেজ থেকে স্বেচ্ছাবসর নেওয়া সংস্কৃতের অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথবাবু এখন পারিবারিক ধারা মেনে ব্যস্ত লেখালেখি নিয়ে। তিনি বলেন, “আমার পছন্দের বিষয় ভেষজ উদ্ভিদবিদ্যা।” তাঁর ‘ট্রিট্রিজ অন ইন্ডিয়ান মেডিসিন্যাল প্ল্যান্ট’ নিয়ে একটি ছয় খণ্ডের পণ্ডিত মহলে বেশ সমাদৃত। এ ছাড়াও রয়েছে ‘হান্ড্রেড মেডিসিন্যাল প্ল্যান্ট অফ ইন্ডিয়া’ নামে আরও একটি বই। সেই সব বইয়ের থেকে প্রাপ্ত অর্থের সবটাই ছাত্রদের জন্য তুলে দেন রবীন্দ্রনাথবাবু। ইতিপূর্বে তিনি নবদ্বীপ বালিকা বিদ্যালয় এবং সারস্বত মন্দির স্কুলে একলক্ষ করে টাকা অর্থ সাহায্য করেছেন। সম্প্রতি তিনি নবদ্বীপের আরসিবি সারস্বত মন্দির স্কুলে মা বেদবতী দেবীর নামে ফের দেড়লক্ষ টাকা তুলে দিলেন। তিনি বলেন, “ওই টাকা থেকে দুঃস্থ পড়ুয়াদের যদি কিছুটা সাহায্য আসে তা হলে ভাল লাগবে।”
ছাত্রবৃত্তির এই টাকা পেয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজনকুমার সাহা বলেন, “স্কুলে প্রকৃতই নিম্নবিত্ত ঘরের ছাত্ররা পড়ে। রবীন্দ্রনাথবাবুর দেওয়া টাকা থেকে স্কুলের ২০ জন ছাত্র আর্থিক সাহায্য পাচ্ছে। এ বারের দেড় লক্ষ টাকায় আরও ৪০ জন ছাত্র আর্থিক সহায়তা পাবে। দিন আনা দিন খাওয়া ঘরের পড়ুয়াদের কাছে ওই সাহায্য যে কতবড় তা বলে বোঝানো যাবে না। আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।”