টোটোর দাপটে হাসপাতালে ঢোকাই দায়

হাসপাতালে ঢোকার মুখে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে টোটো। টোটোর সারি ঠেলে মুমূর্ষু রোগীবাহী অ্যাম্বুল্যান্স ভিতরে ঢুকতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। দিনের পর দিন মেডিক্যালের সামনে এমন দৃশ্য দেখতে দেখতে গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে লোকজনের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০২:২৪
Share:

হাসপাতালের সামনে টোটোর দাপাদাপি। — নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে ঢোকার মুখে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে টোটো। টোটোর সারি ঠেলে মুমূর্ষু রোগীবাহী অ্যাম্বুল্যান্স ভিতরে ঢুকতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। দিনের পর দিন মেডিক্যালের সামনে এমন দৃশ্য দেখতে দেখতে গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে লোকজনের। প্রতিবাদ করেও কোনও লাভ হয় না। টোটো চালকে‌রা মেডিক্যালের সামনে থেকে টোটো সরাতে নারাজ।

Advertisement

অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে শুয়ে রোগী কাতরাচ্ছেন, কিন্তু টোটোওয়ালার কোনও হেলদোল নেই। টোটো চালকেরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলতেই ব্যস্ত। অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা আসন থেকে মুখ বার করে রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য চিৎকার করলেও সে কথা কানে তোলে না টোটো চালকেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, বিষয়টি একাধিকবার প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করে না। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিদায়ী সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাসপাতালের গেট থেকে আমার অফিস পর্যন্ত গাড়িতে পাঁচ মিনিটের পথ। একদিন হাসপাতালে ঢোকার মুখে টুকটুকের যানজটে আটকে পড়ি। গেট থেকে অফিসে আসতে পাক্কা পাক্কা আধ ঘন্টা লাগে। প্রতিদিনই এ সমস্যা লেগেই থাকে। সমস্যার কোনও সমাধানই হয় না।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পর হাসপাতালের গেটের সামনে দু’জন সিভিক ভলানটিয়ারকে মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা নীরব দর্শক হয়ে টোটোর গা-জোয়ারি দেখেই সময় কাটান।

Advertisement

জেলা হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উত্তীর্ণ হওয়ার পর উল্লেখযোগ্য হারে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালের মূল ফটক থেকে মেরেকেটে ২০০ ফুট দূরে গড়ে উঠেছে নতুন বহির্বিভাগ। বহির্বিভাগের গা-লাগোয়া রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকজনের যাতায়াতের রাস্তা দখল করে অস্থায়ী স্ট্যান্ড বানিয়ে টোটো চালকেরা। আর সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে গোটা পঞ্চাশেক টোটো। ওই টোটোই যানজট তৈরি করছে।

ব্যস্ততম স্টেশন রোডের উত্তর দিকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অবস্থান। বহরমপুর স্টেশনে কোনও ট্রেন থামলেই স্টেশন রোডে বাড়তি যান চলাচল করে। হাসপাতালের গেটের উল্টো দিকেই স্বর্ণময়ী সবজি বাজার। ওই বাজার থেকে যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য স্টেশন রোডের উপরে সারি দিয়ে যেমন টোটো দাঁড়িয়ে থাকে, তেমনি হাসপাতালের গেটের ঠিক উল্টো দিকে ওষুধের দোকানের সামনে রাস্তা দখল করে সারি দিয়ে অপেক্ষা করে টোটো। সব মিলিয়ে হাসপাতালের গেটের মুখ বন্ধ হয়ে পড়েছে।

মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক সুপর্ণ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘হাসাপাতালের সুপার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার চেষ্টা করছি।’’ বহরমপুর নাগরিক সমিতির পক্ষে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিষাণকুমার গুপ্ত বলেন, ‘‘প্রশাসনের উচিৎ এর দ্রুত কোনও হেস্তনেস্ত করা।’’ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল বলেন, ‘‘ওই বিষয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করছি না।’’ আইএনটিউসি অনুমোদিত বহরমপুর টুকটুক সমিতির জেলা সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ দে বলেন, ‘‘হাসপাতালের গেটের সামনে টোটো দাঁড়িয়ে থাকলে অ্যাম্বুল্যান্সের যাতায়াতে অসুবিধে হয়। শহরের বাইরের টোটো চালকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও কিছুই হয়নি।’’ তৃণমূলের টুকটুক সমিতির পক্ষে সুমন্ত দাস জানান, তাঁরা হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু নিত্যদিনের যানজট তো অন্য কথা বলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন