গরমে বাজার যেন শনিবারের অফিস

সকাল দশটা। বাজারহাটে লোক নেই। তবু অধিকাংশ দোকানের ঝাঁপ অর্ধেক নামানো। নয়তো ভারি পর্দা দিয়ে ঢাকা। অফিস-কাছারি, স্কুল-কলেজের যাওয়ার সময় পেরোতেই ভিড় উধাও। কোনও রাজনৈতিক ফতোয়া নয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ১২:৫০
Share:

তাঁরা-কোথায়: বেলা পড়ে এলেও বিকিকিনি স্তব্ধ তখনও। বহরমপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

সকাল দশটা। বাজারহাটে লোক নেই। তবু অধিকাংশ দোকানের ঝাঁপ অর্ধেক নামানো। নয়তো ভারি পর্দা দিয়ে ঢাকা। অফিস-কাছারি, স্কুল-কলেজের যাওয়ার সময় পেরোতেই ভিড় উধাও।

Advertisement

কোনও রাজনৈতিক ফতোয়া নয়। প্রবল গরমে সপ্তাহখানেক ধরে এ ছবি নদিয়া বা মুর্শিদাবাদের। নিয়মিত কালবৈশাখী সত্ত্বেও দুই জেলাতে গরম বেড়েই চলেছে। পারদ বাড়ছে হু হু করে। কোনও কোনও দিন সেটা ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। তাই কড়া রোদের তাপ এবং গরমে থমকে গিয়েছে শহর, গ্রামের খুচরো কেনাবেচা, পাইকারি আমদানি-রপ্তানি।

ব্যবসায়ীদের কথায়, ব্যবসা কার্যত এখন একবেলায় এসে ঠেকেছে। এমনই দুরাবস্থা যে ‘বউনি’ পর্যন্ত হচ্ছে না কোনও কোনও দোকানে। কোথাও আবার বেচাকেনা অর্ধেকে এসে ঠেকেছে। নবদ্বীপের পাইকারি ব্যবসার বড়বাজার বা জেলা সদরের সাধারণ বাজার থেকে কান্দি মহকুমা বাজার সর্বত্রই ছবিটা এক রকম। খদ্দের তো দূরের কথা ঝাঁ চকচকে পোশাকে ফিটফাট সেলসম্যানেরাও বেপাত্তা!

Advertisement

কান্দি মহকুমা বাজারের উপর নির্ভর করেন মহকুমার পাঁচটি ব্লকের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গরমে বাড়ির বাইরে পা রাখতে ভয় পাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। কান্দির বৃন্দাবন দাস বলেন, “দিন দশেক বাদে বোনের বিয়ে। গরম এত যে বাজারই করে উঠতে পারিনি।” বড়ঞার ব্যবসায়ী দীপক দাসের দোকানের বহু জিনিস নেই। গরমের জন্য তিনদিন ধরে বাজারেই আসতে পারছেন না তিনি। কান্দি মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারকেশ্বর প্রামাণিক বলেন, “শহরের বাসিন্দা ছাড়াও আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারাও আমাদের বড় ক্রেতা। কিন্তু সকাল যে হারে পারদ চড়ছে তাতে খদ্দেররা বাজারমুখো হচ্ছেন না। দু’এক পশলা বৃষ্টির পর বিকালে বাজার জমছে। কিন্তু তখন আবার গ্রামের খরিদ্দারদের দেখা মেলে না।”

নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “এই প্রচণ্ড গরমে ব্যবসা বাণিজ্যের সময় বিলকুল বদলে গিয়েছে। সকাল সাতটা থেকে এগারোটার মধ্যেই খুচরো পাইকারি সব কেনাবেচা শেষ হয়ে যাচ্ছে। গরমে ফ্যান, কুলার, এসি, ঠান্ডা পানীয়, রোদচশমা, ছাতা, টুপির মতো কিছু জিনিস ছাড়া বাকি ব্যবসায়ীদের অবস্থা মোটে ভাল নয়।”

কৃষ্ণনগরের চারপাশের ভাণ্ডারখোলা, দইয়ের বাজার, বাহাদুরপুর, ধর্মদা, মুড়াগাছা, দিগনগর, শম্ভুনগর প্রভৃতি এলাকার ব্যবসায়ীরা যাবতীয় জিনিস পাইকারি কেনেন কৃষ্ণনগরের গোয়ারিবাজার, পাত্রমার্কেট বা বেলেডাঙা বাজার থেকে। নবদ্বীপের পাইকারি বড়বাজারের উপর নির্ভর করে পার্শ্ববর্তী বর্ধমানের গ্রামীণ বাজারগুলি। পূর্বস্থলী, ভাণ্ডারটিকুরি, বিদ্যানগর, জাহান্নগরের মতো দূরের গ্রামের ক্রেতারা বাজারে এলেও দশটার মধ্যেই ফিরে যাচ্ছেন। এক ব্যবসায়ীর কথায় ‘বাজার এখন শনিবারের অফিস। একবেলায় এসে ঠেকেছে।’ নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস বলেন, “গরমে ক্রেতারা প্রয়োজনের জিনিসটুকু ছাড়া কিছুই কিনছে না। কোনও কোনও ব্যবসা পঞ্চাশ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। তাপমাত্রা না কমা পর্যন্ত এ মন্দা কাটবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন