বিদেশে গিয়ে বিপাকে শ্রমিক, উদ্বিগ্ন পরিবার

রুহুল আমিন একা নন, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান ও উত্তর ২৪ পরগনার এমন ন’জন যুবক সৌদি আরবে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ। নদিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে হাঁসখালির বড়চুপড়িয়ার দু’জন, পূর্ব হরিণডাঙার এক জন ও কৃষ্ণগঞ্জের ভাজনঘাটের দু’জন আছেন। তাঁরা সকলেই এখন নিজের দেশে ফেরার জন্য মরিয়া। কিন্তু ফিরতেও পারছেন না।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:২২
Share:

বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ওঁরা। ভাবতেন কোনও মতে সেখানে এক বার যেতে পারলেই সব মুশকিল আসান হয়ে যাবে। শ্রী ফিরবে সংসারে। তাই মহাজনের কাছে ওঁরা ধার নিলেন মাথা পিছু দেড় লক্ষ টাকা। পাঁচ শতাংশ মাসিক সুদে। তার পরে সটান সৌদি আরব।

Advertisement

স্বামী বিদেশে। গর্ব করে সে কথা পড়শিদের বলতেন স্ত্রী। তিনিও স্বপ্ন দেখতেন, বিদেশ থেকে টাকা এলে মেয়েটাকে ভাল গৃহশিক্ষক দেবেন। কিনে দেবেন সোনার দুল। ধীরে ধীরে মহাজনের টাকা শোধ হয়ে গেলে বেশ কিছু টাকা সঞ্চয়ও হবে। কিন্তু কোথায় কী? স্বামী বিদেশ গেলেন। কিছু দিন পরে অভাবের গুঁতোয় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হল বড়চুপড়িয়ার নাজমা বিশ্বাসকে। চার মাস বিদেশে যাওয়ার পরেও বাড়িতে একটা টাকাও পাঠাতে পারেননি রুহুল আমিন বিশ্বাস। নাজমার অভিযোগ, ‘‘কী করে পাঠাবে? লোকটাই নিজেই তো চরম কষ্টের মধ্যে আছে। কোনও কাজ পায়নি। ছোট্ট একটা গুমটি ঘরে ওকে রাখা হয়েছে। ঠিক মতো খাবার দেওয়াও হচ্ছে না। কিছু বলতে গেলে বেধড়ক মারধরও করা হচ্ছে।’’

রুহুল আমিন একা নন, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান ও উত্তর ২৪ পরগনার এমন ন’জন যুবক সৌদি আরবে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ। নদিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে হাঁসখালির বড়চুপড়িয়ার দু’জন, পূর্ব হরিণডাঙার এক জন ও কৃষ্ণগঞ্জের ভাজনঘাটের দু’জন আছেন। তাঁরা সকলেই এখন নিজের দেশে ফেরার জন্য মরিয়া। কিন্তু ফিরতেও পারছেন না।

Advertisement

রুহুল এলাকায় কাঠের মিস্ত্রি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁকে বলা হয়, আরবে গিয়ে তিনি সেই কাজই করবেন। অভিযোগ, সেখানে গিয়ে কাজ মেলেনি। যাঁর মাধ্যমে রুহুল ও অন্যরা সৌদি যান, সেই জসিমউদ্দিন ধাবকও বড় চুপড়িয়ারই বাসিন্দা। জসিমউদ্দিন বলছেন, ‘‘অনেককেই তো বিদেশে পাঠাই। তাঁরা কাজও পান। এ বারে কেন যে এমনটা হল বুঝতে পারছি না। আমরা চেষ্টা করছি ওঁদের ফিরিয়ে আনার।” কিন্তু প্রত্যেকের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া হয়েছে তার কী হবে? জসিমউদ্দিন বলেন, “দেখি, কতটা ফিরিয়ে দেওয়া যায়।” সম্প্রতি রুহুল আমিন-সহ কয়েক জনের পরিবারের তরফে গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে জেলাশাসককে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, “আগেও বিদেশে গিয়ে অনেকে বিপাকে পড়েছিলেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আশা করছি, ওঁদেরও ফিরিয়ে আনতে পারব।’’

রুহুল আমিনের মতো ক’বছর আগে ইরাকে গিয়েছিলেন তেহট্টের ইলসামারির খোকন সিকদার, সমর টিকাদার। তাঁরা বাড়ি ফেরেননি। তাঁরা কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কী ভাবে আছেন তা জানা নেই তাঁর পরিবারেরও। রুহুলের স্ত্রী নাজমা বলছেন, ‘‘লোকটা ফোনও করতে পারছে না। আমরা ফোন করলে লুকিয়ে কথা বলতে হয়। ও বাড়ি ফেরার জন্য কান্নাকাটি করছে।” আর এক জন আলাউদ্দিন ধাবকের স্ত্রী সাকিনা বলছেন, “দরকার নেই টাকার। মানুষগুলো ভালয় ভালয় বাড়ি ফিরে আসুক। আগে যেমন কষ্ট করে বেঁচেছিলাম, সে ভাবেই থাকব।” কিন্তু ফিরেও রক্ষা নেই! কারণ পাওনাদারদের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। ৫ শতাংশ মাসিক সুদ ও আসল মিলিয়ে টাকার অঙ্কটা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। নাজমা বলছেন, ‘‘যে ভাবেই হোক সে টাকা শোধ করব। লোকটা বাড়ি ফিরুক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন