‘উধাও’ বহু চিকিৎসক,  ধুঁকছে স্বাস্থ্য

সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার ফোন করেন ওই চিকিৎসককে। মোবাইল বন্ধ। শেষে যখন তাঁকে পাওয়া গেল তখন রোগীর ভিড় পাতলা। ফোনের ও প্রান্ত থেকে চিকিৎসক বলেন, “মায়ের শরীর খারাপ। যেতে পারছি না।”

Advertisement

সুস্মিত হালদার ও শুভাশিস সৈয়দ

কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৬
Share:

সকাল থেকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের আলট্রাসোনোগ্রাফি বিভাগের সামনে বসে ছিলেন রোগীরা। তাঁদের কেউ প্রসূতি, কেউ আবার এসেছেন অসহ্য পেটে ব্যথা নিয়ে। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা নেই। সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার ফোন করেন ওই চিকিৎসককে। মোবাইল বন্ধ। শেষে যখন তাঁকে পাওয়া গেল তখন রোগীর ভিড় পাতলা। ফোনের ও প্রান্ত থেকে চিকিৎসক বলেন, “মায়ের শরীর খারাপ। যেতে পারছি না।” দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে ওই চিকিৎসককে চার বার শো-কজ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

শুধু ইউএসজি বিভাগে এই অবস্থা তা নয়। হাসপাতালেরই এক কর্মীর কথায়, “বেশির ভাগ ডাক্তার দু’তিন দিনের বেশি হাসপাতালে আসেন না। নিজেদের মত করে ডিউটি ভাগ করে নেন। দু’দিন এসে বাকি দিনের সই করে দেন হাজিরা খাতায়। এটা ‘ওপেন সিক্রেট’।” গত সপ্তাহেই এ ব্যাপারে গোটা রাজ্যে একটি নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে বলে দেওয়া হয়েছে, দিন ভাগাভাগি করে আর ডিউটি করা যাবে না। কিন্তু বিভিন্ন জেলা সূত্রে খবর, পরিস্থিতি এখনও বদলায়নি।

কালীগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তিমিরবরণ ভদ্র গত ৬ ফেব্রুয়ারি একটি নির্দেশিকা জারি করেছিলেন। তাতে মীরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসকের সুদীর্ঘ অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, কোনও ডাক্তার এই ভাবে কাউকে কিছু না-বলে কামাই করলে তাঁকে ধরে আনতে হবে। ধরে আনার জন্য স্থানীয় থানার ওসি-কে অনুরোধ জানান বিএমওএইচ। তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, ডাক্তারেরা কি দুষ্কৃতী যে, পুলিশ ধরে আনবে? স্বাস্থ্য ভবনের একাংশ মনে করছে, ডাক্তারেরা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে পরিষেবা চালাতে মরিয়া হয়ে কখনও-কখনও জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা এমন চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। যেমন সম্প্রতি ধর্মদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না বলে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছিল।

Advertisement

গত বছর ৬ অক্টোবর আজিমগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে এক রোগী ভর্তির পরে পরিবারের এক সদস্য রিভলভার উঁচিয়ে শাসানি দেন—‘স্যালাইনের সুঁচ ফোটানোর সময় এক ফোঁটা রক্ত বার হলে খুলি উড়ে যাবে!’ ওই ঘটনার পর আজিমগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক প্রদীপ বিশ্বাস হাসপাতাল আসা বন্ধ করে দেন। তাতে বিপাকে পড়েন ওই চিকিৎসকের অধীনে থাকা বাকি রোগীরা। ওই ঘটনার তিন দিন পরে এক যুবকের দেহ এনে বাড়ির লোক ‘চিকিৎসা শুরু করার’ নির্দেশ দেন জিয়াগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক দেবেন্দ্রনাথ সরকারকে। তিনি সেখানে যাওয়া বন্ধ করেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর পরিস্থিতি সামাল দেন। মুর্শিদাবাদ সিএমওএইচ নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘যাঁরা কঠিন অবস্থা সামলে পরিষেবা দিতে অক্ষম তাঁদের সরকারি চাকরির যোগ্যতা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন